হাওজা নিউজ এজেন্সি: দোয়া ও জিয়ারতসমূহে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) সম্পর্কে যে বিশেষ সম্মানজনক উপাধি ও অবস্থান বর্ণিত হয়েছে, তা একদিকে যেমন তাঁর স্থানকে স্পষ্ট করে, অন্যদিকে তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও অনুসরণের পথকে খুলে দেয়। এখানে আমরা সেসব উপাধি ও মর্যাদার কিছু অংশ তুলে ধরছি:
১. خَليفَةُ الله، حُجَّةُ الله – আল্লাহর প্রতিনিধি ও হুজ্জাত
জিয়ারতে আলে ইয়াসিন (ياسين زيارت آل)- এ বলা হয়েছে:
السَّلَامُ عَلَيكَ يا خَلِيفَةَ اللَّهِ وَ نَاصِرَ حَقِّهِ، السَّلَامُ عَلَيكَ يا حُجَّةَ اللَّهِ وَ دَلِيلَ إِرَادَتِه
আপনার প্রতি সালাম হে আল্লাহর প্রতিনিধি ও তাঁর সত্যের সাহায্যকারী; আপনার প্রতি সালাম হে আল্লাহর হুজ্জাত ও তাঁর ইচ্ছার পথপ্রদর্শক।
এই উক্তি ইঙ্গিত দেয় যে, 'খলিফাতুল্লাহ' তথা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে ইমাম মাহদী (আ.ফা) এমন এক উচ্চতম ও একক অবস্থানে অধিষ্ঠিত, যেখানে তিনি তাঁর যুগে অতুলনীয়। তিনি আল্লাহর ইচ্ছার বাস্তবায়নকারী এবং তার আদেশের জীবন্ত সাক্ষ্য।
২. بابُ الله، سبيلُ الله –আল্লাহর দরজা ও পথ:
জিয়ারতে আলে ইয়াসিন (ياسين زيارت آل)- এ বলা হয়েছে:
السَّلَامُ عَلَيكَ يا بابَ اللَّه
আপনার প্রতি সালাম হে আল্লাহর দ্বার!
এবং জিয়ারতে স’হিবুল আমর (زيارت صاحبالأمر) (আ.)-এ বলা হয়েছে:
السَّلَامُ عَلَيكَ يا سَبِيلَ اللَّهِ الَّذِي مَنْ سَلَكَ غَيرَهُ هَلَك
আপনার প্রতি সালাম হে আল্লাহর দ্বার, যে এই পথ ব্যতীত অন্য পথে চলে, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত।
এইসব অভিব্যক্তি জানিয়ে দেয়, যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভ করতে চায়, তার অবশ্যই ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং তাঁর ইমামত ও নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে। 'بابالله' ও 'سبيلالله' অর্থাৎ আল্লাহর দ্বার ও পথ হলেন তিনিই—আল্লাহর নিকট যাওয়ার একমাত্র নিরাপদ ও নিশ্চিত রাস্তা।
৩. ميثاقُ الله، وعدُ الله – আল্লাহর অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি:
জিয়ারতে আলে ইয়াসিন (ياسين زيارت آل)- এ উল্লেখ রয়েছে:
السَّلَامُ عَلَيكَ يا مِيثَاقَ اللَّهِ الَّذِي أَخَذَهُ وَ وَكَّدَهُ، السَّلَامُ عَلَيكَ يا وَعْدَ اللَّهِ الَّذِي ضَمِنَه
আপনার প্রতি সালাম হে আল্লাহর সেই অঙ্গীকার, যা তিনি মানবজাতির নিকট থেকে গ্রহণ ও দৃঢ় করেছেন। আপনার প্রতি সালাম হে আল্লাহর সেই প্রতিশ্রুতি, যা তিনি নিজেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-কে 'মিথাকুল্লাহ' (আল্লাহর অঙ্গীকার) বলা হয়েছে, অর্থাৎ তিনি সেই সর্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি যার প্রতি আনুগত্য মানেই পুরো দ্বীন ও শরিয়তের প্রতি আনুগত্য। আর তাঁকে 'ওয়াদুল্লাহ' (আল্লাহর প্রতিশ্রুতি) বলা হয়েছে এ কারণে যে, তিনি সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ, যাঁর আবির্ভাবের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে—যেখানে পৃথিবীতে ন্যায়পরায়ণদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি এমন এক প্রতিশ্রুতি, যা সমস্ত আসমানী কিতাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং যার বাস্তবায়নে কোনো সন্দেহ নেই।
৪. عينُ الله الناظِرَة – আল্লাহর দৃষ্টিশক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শী:
ইমাম রেজা (আ.) থেকে বর্ণিত এক দোয়ায় এসেছে:
وَ عَيْنِكَ النَّاظِرَةِ عَلَى بَرِيتِكَ وَ شَاهِدِكَ عَلَى عِبَادِكَ
তিনিই আপনার সেই দৃষ্টি, যা আপনার সৃষ্টির উপর রয়েছে এবং আপনার সেই সাক্ষী, যিনি আপনার বান্দাদের উপর পর্যবেক্ষক।
এই দোয়ার ভিত্তিতে বলা যায়, ইমাম মাহদী (আ.ফা.) শুধু আল্লাহর হুজ্জাত নন, বরং তিনি 'দেখছেন', জানেন ও পর্যবেক্ষণ করছেন; মানুষের প্রকাশ্য ও গোপন কাজ তাঁর দৃষ্টিসীমার বাইরে নয়। এটি বিশ্বাস করা, মানুষের চরিত্র সংশোধন ও আত্মশুদ্ধির জন্য দারুণ সহায়ক হতে পারে।
এ বিষয়ে ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর এক বাণী উল্লেখযোগ্য:
فَإِنَّا نُحِيطُ عِلْمًا بِأَنبَائِكُمْ وَ لَا يَعْزُبُ عَنَّا شَيْءٌ مِنْ أَخْبَارِكُم
আমরা তোমাদের সকল সংবাদ সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত আছি এবং তোমাদের কোনো খবর আমাদের অজানা নয়। [আল-ইহতেজাজ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৯৫]
পরিসমাপ্তি: ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর এসব উপাধি ও অবস্থান একদিকে যেমন তাঁর সর্বোচ্চ মহত্বকে নির্দেশ করে, তেমনি এ কথাও স্পষ্ট করে যে, তাঁকে জানার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর দিকে সহজে ফিরে যেতে পারে। তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত থাকা মানেই আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ ধরা। এ আলোচনা আমাদের আত্মিক ও সামাজিক বিকাশে এক মূল্যবান পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করতে পারে।
এই আলোচনা চলমান...
গ্রন্থসূত্র: নেগীনে অফারিনেশ গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত রূপে সংকলিত।
আপনার কমেন্ট