রবিবার ৩ আগস্ট ২০২৫ - ১৪:০১
মুসলিম সমাজ গাজাবাসীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন

গাজা এক টুকরো মুক্তভূমি নয়, বরং এক খোলা জেলখানা। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধের সীমাহীন ঘাটতি—এর মধ্যেই বেঁচে আছে লাখ লাখ মানুষ।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে অবর্ণনীয় নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যা। ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা, অবরোধ, শিশুহত্যা, হাসপাতাল ও স্কুলে বোমাবর্ষণ আজকের পৃথিবীতে এক প্রায় স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো—বিশ্বের মুসলিম সমাজ আজও নিরব! প্রশ্ন জাগে: মুসলিম সমাজ কী তবে তাদের আত্মিক, নৈতিক ও ঐক্যবদ্ধ শক্তি হারিয়ে ফেলেছে?

এই নীরবতা শুধু লজ্জাজনক নয়, এটি চরম অপরাধ। আজ যদি আওয়াজ না তোলা হয়, তবে ইতিহাস এই নীরবতা কোনোদিন ক্ষমা করবে না।

গাজাবাসীদের বাস্তবতা: নরকের মাঝেও বেঁচে থাকা

গাজা এক টুকরো মুক্তভূমি নয়, বরং এক খোলা জেলখানা। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধের সীমাহীন ঘাটতি—এর মধ্যেই বেঁচে আছে লাখ লাখ মানুষ। প্রতিদিন বোমার শব্দে ঘুম ভাঙে শিশুদের, প্রতিদিন কবর খুঁড়তে হয় মায়েদের।

এই মানুষগুলো কেবল মুসলমানই নয়, তারা আমাদের ভাই, বোন, সন্তানসম। গাজাবাসীদের উপর চালানো এই বর্বরতা শুধু রাজনৈতিক ইস্যু নয়—এটি একটি মানবিক ও ঈমানি বিষয়।

মুসলিম সমাজের নিস্ক্রিয়তা: এক আত্মঘাতী নিরবতা

বিশ্বে প্রায় ২ বিলিয়ন মুসলমান—কিন্তু এই বিশাল জনসংখ্যার একতা কোথায়? মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আজ বিচ্ছিন্ন, নিজেদের স্বার্থে ব্যস্ত। কেউ কেউ শুধু বিবৃতি দেয়, কেউবা মুখে দুঃখপ্রকাশ করে কিন্তু কাজে নিশ্চুপ। অথচ রাসূল (সা.) বলেছেন:

“মুসলিমরা একটি দেহের মতো—যদি একটি অঙ্গ ব্যথিত হয়, গোটা দেহ তা অনুভব করে।”

তবে আজ আমরা কি সত্যিই এই দেহের অংশ? না কি আমরা মৃত বিবেকের অধিকারী এক গোষ্ঠী?

আওয়াজ তোলার গুরুত্ব: আজ না বললে কাল কেউ বলবে না

গাজার আজকের দুর্দশা আমাদের আগামী দিনের সতর্কবার্তা। আজ গাজা, কাল আমাদের শহর, দেশ, পরিবার। ইতিহাস সাক্ষী, অন্যায়কে যেদিন চুপচাপ সহ্য করা হয়, সেদিন সেই অন্যায় আরও গভীর হয়ে ফিরে আসে।

আজ যারা নিরব, তারা একদিন এই প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন:
“তোমরা তখন কী করছিলে?”

কীভাবে মুসলিম সমাজ আওয়াজ তুলতে পারে?
১. ঐক্যবদ্ধ হতে হবে:
মাজহাব, বর্ণ, ভাষা ভুলে একটি কিবলার অধীন এক উম্মাহ হয়ে দাঁড়াতে হবে।
২. প্রতিবাদী ভূমিকা রাখতে হবে:
রাষ্ট্র, নেতৃত্ব, মিডিয়া এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে চাপ দিতে হবে গাজার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য।
৩. বয়কট করতে হবে দখলদারদের পৃষ্ঠপোষকদের:
যেসব কোম্পানি ইসরায়েলকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে, তাদের পণ্য বর্জন করুন।
৪. মানবিক সাহায্য পাঠান:
গাজার মানুষের জন্য অর্থ, চিকিৎসা, খাদ্যসহ সহায়তা পাঠাতে হবে আন্তরিকভাবে।
৫. দোয়া এবং কুরআনের আলোয় জেগে উঠুন:
আমাদের অন্তরকে জাগাতে হবে। আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে ঈমান ও তাকওয়ার সাথে।

আজ গাজা, কাল আপনি—এই সত্য যত দ্রুত উপলব্ধি করা যাবে, তত দ্রুত মুসলিম সমাজ জেগে উঠতে পারবে। আমাদের নীরবতা আজ যদি ইসরায়েলের বর্বরতা টিকিয়ে রাখে, তবে আগামীকাল সেই নীরবতা আমাদের সন্তানদের চোখে অভিশাপ হয়ে ফিরে আসবে।

আসুন, মুসলিম সমাজের প্রতিটি হৃদয় থেকে আওয়াজ উঠুক:
“গাজা তুমি একা নও।”
“আমরা আছি, আমরা জাগবো, আমরা রুখে দাঁড়াব।”

"তোমরা যদি অন্যায় দেখে তা হাত দিয়ে পরিবর্তন না করো, তাহলে আল্লাহ সেই জাতিকে শাস্তি দেন, যারা অন্যায় সহ্য করে।"

রিপোর্ট: হাসান রেজা

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha