মঙ্গলবার ১৯ আগস্ট ২০২৫ - ১২:১০
নৈতিক একাকীত্ব

সত্যিকারের মর্যাদা নিহিত রয়েছে নৈতিকতায়। নীতির প্রতি অটল থাকা অনেক সময় সংখ্যাগরিষ্ঠের বিপরীতে একাকীত্বের কারণ হয়, তবে প্রজ্ঞা ও সৎকর্মই মানুষকে আত্মমর্যাদা রক্ষা, সামাজিক প্রভাব বিস্তার এবং আধ্যাত্মিক পূর্ণতার পথে সহায়তা করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইজ্জত এমন এক মানসিক অবস্থা যা মানুষকে ভেঙে পড়তে দেয় না। প্রত্যেকেই মর্যাদা ও সম্মান চায়; জীবনে জয়ী ও সম্মানিত হতে চায়। আল্লাহ মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে প্রকৃত মর্যাদার পথ হলো— সঠিক চিন্তা ও সৎকর্ম।

নৈতিকতা ও একাকীত্ব
নৈতিকতা হলো সঠিক চিন্তা ও সৎকর্মের অন্যতম রূপ। যে ব্যক্তি মর্যাদা চায়, তাকে অবশ্যই নৈতিকতাকে জীবনের মূলনীতি করতে হবে। কিন্তু আজকের সমাজে একটি বড় সংকট হলো নৈতিক একাকীত্ব— নীতিবান মানুষ যখন সমাজের ভ্রান্ত আচরণ বা অনৈতিক সংখ্যাগরিষ্ঠের বিপক্ষে দাঁড়ায়, তখন সে প্রায়শই একা হয়ে যায়।

তবুও মর্যাদা রক্ষার জন্য নীতিবান মানুষকে নিজের নীতি ধরে রাখতে হয়। এভাবেই তিনি ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে প্রভাবশালী ও সফল হতে পারেন। তবে সমাজে একাকীত্ব এড়াতে হলে প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং প্রভাব বিস্তারের পথে থাকা প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে।

সংখ্যাগরিষ্ঠের অন্ধ অনুসরণ
নৈতিকতার পথে অন্যতম বাধা হলো অন্ধভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠকে অনুসরণ করা। মানুষ স্বভাবতই সমাজচ্যুত হতে চায় না, তাই অনেকে ভুল আচরণকেও অনুসরণ করে। অথচ কুরআনে সতর্ক করা হয়েছে: “তুমি যদি দুনিয়াবাসী অধিকাংশ লোকের কথামত চল তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যূত করে ফেলবে, তারাতো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে, আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে”। (সূরা আনআ’আম, আয়াত ১১৬)

প্রজ্ঞা ও পূর্ণতার পথ
নৈতিকতা রক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রজ্ঞা ও সৎকর্ম। প্রজ্ঞা হলো পরিস্থিতি অনুযায়ী সর্বোত্তম পথ বেছে নেওয়ার ক্ষমতা। মানুষের আত্মিক ক্ষমতা যত বাড়ে, প্রজ্ঞা তত পরিপূর্ণ হয় এবং সে লোভ-ক্রোধের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়। তখন তার আচরণ হয় যুক্তিসঙ্গত, নৈতিক ও উত্তম— যা তাকে কেবল ব্যক্তিগত পূর্ণতায় নয়, বরং সমাজের কল্যাণেও এগিয়ে দেয়।

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন, “যে নিজের আত্মাকে সম্মান করে, তার কাছে কামনা-বাসনা তুচ্ছ হয়ে যায়।”

নবীজীর (সা.) সীরাত: চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন এই ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উদাহরণ। মক্কার অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে প্রচণ্ড চাপ ও প্রতিবন্ধকতার মাঝেও তিনি সত্যবাদিতা, আমানতদারি ও সুন্দর চরিত্র দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছিলেন এবং ধীরে ধীরে মানুষের হৃদয়কে সত্যের দিকে আকৃষ্ট করেছিলেন। এ সীরাত শিক্ষা দেয় যে নীতির প্রতি অটল থাকা মানে বিচ্ছিন্নতা বা কঠোরতা নয়, বরং প্রজ্ঞাপূর্ণ মেলামেশা ও উৎকৃষ্ট আচার-আচরণ।

নৈতিক সমাজের ভিত্তি
নীতিবান মানুষ আচরণের মাধ্যমে সবচেয়ে গভীর প্রভাব রাখতে পারেন। যেমন— সচেতনভাবে শোনা, সম্মানজনক আলাপ বা নিঃস্বার্থ সাহায্যের মাধ্যমে। প্রায়শই আচরণই কথার চেয়ে বেশি কার্যকর প্রভাব ফেলে।

এভাবে নীতিবান মানুষ কেবল নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনে। নৈতিকতা ও দয়ার প্রভাবে সমাজে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং সামাজিক সুস্থতা নিশ্চিত হয়। যখন একটি সমাজ নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক আস্থার ভিত্তিতে দাঁড়ায়, তখন সেটি হয়ে ওঠে প্রকৃত অর্থে একটি কল্যাণময় ও সফল সমাজ।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha