বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫ - ১৪:২৭
আল্লাহর আনুগত্যের পথ স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়ার — জোরপূর্বক নয়

মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি তাকে প্রায়ই অবাধ্যতা ও পাপের পথে টেনে নেয়। তবে মহান আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ ও নির্দেশনার মাধ্যমে মানুষের সামনে সর্বদা আনুগত্যের সোজা পথ উন্মুক্ত করে রাখেন। এই আল্লাহপ্রদত্ত আয়াত ও নিদর্শনগুলো এমনভাবে মানুষের হৃদয়ে প্রভাব ফেলে যে, প্রবৃত্তির টান ও আল্লাহর আদেশের আহ্বানের সংঘর্ষে মানুষ যেন সচেতনভাবে ও ভালোবাসার টানে আল্লাহর আনুগত্যের পথই বেছে নেয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি’র এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নীতিশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিকতার বিশিষ্ট শিক্ষক মরহুম আয়াতুল্লাহ আজিজুল্লাহ খোশওয়াক্ত (রহ.) তাঁর এক নৈতিক পাঠে “মানুষের প্রতি শয়তানের শত্রুতা” বিষয়ে বলেন, “মহান আল্লাহ, যিনি মানবজাতির স্রষ্টা, তিনিই সর্বাধিক অবগত যে কিভাবে মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কোষ একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং সমন্বিতভাবে কাজ করে। আমরা মানুষ এই জটিল ব্যবস্থার অনেক বিষয় জানি না, কিন্তু আল্লাহ তা সম্পূর্ণরূপে জানেন — তিনিই সর্বজ্ঞ ও সর্বদ্রষ্টা।”

তিনি আরও বলেন, মানুষের ভেতরে এমন কিছু প্রবৃত্তি (গরায়েজ) রয়েছে, যা তাকে অনেক সময় অকল্যাণকর কাজের দিকে টেনে নেয়। এই প্রবৃত্তিগুলো মানুষকে আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করতে প্রলুব্ধ করে। ফলে মানুষের ভেতরে শুরু হয় এক গভীর সংঘাত — একদিকে আল্লাহর আদেশ, অন্যদিকে প্রবৃত্তির টান।

এই সংঘাত কখনো এতই তীব্র হয়ে ওঠে যে মানুষ বুঝতে পারে না, কোন পথটি সঠিক। ঠিক এই অবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁর অসীম করুণা দ্বারা মানুষকে পথ দেখান। তিনি তাঁর আয়াত, নিদর্শন ও কিতাবের বাণী মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন — যাতে সে মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলে আল্লাহর নির্দেশের দিকেই ঝুঁকে পড়ে।

আনুগত্যের পথ: জবরদস্তি নয়, বরং স্বেচ্ছায় নির্বাচিত
আয়াতুল্লাহ খোশওয়াক্ত বলেন, “আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা কোনো বাধ্যবাধকতার ফল নয়, বরং এটি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছা ও অভ্যন্তরীণ আকর্ষণের ফল। এ এক মহান নিয়ামত যে আল্লাহ মানুষকে এমন এক হৃদয় ও বিবেক দিয়েছেন, যা তাকে সত্য চিনতে ও তা গ্রহণ করতে সক্ষম করে।”

যখন আল্লাহর আদেশ মানুষের সামনে আসে, তখন তার সামনে একটি দ্বিমুখী পথ খুলে যায়:
• আল্লাহর নির্দেশ
• প্রবৃত্তির আহ্বান

সাধারণত প্রবৃত্তির দিকটি মানুষের কাছে অধিক আকর্ষণীয় মনে হয়, কারণ তা দৃশ্যমান ও তাৎক্ষণিক সুখের প্রতিশ্রুতি দেয়। পক্ষান্তরে, আল্লাহর নির্দেশ অদৃশ্য ও পরকালমুখী হওয়ায় তা গভীর চিন্তা ও ঈমানের দাবি রাখে।

কিন্তু আল্লাহর আয়াতসমূহ এমন প্রভাবশালী ও হৃদয়গ্রাহী যে, যদি মানুষ আন্তরিকভাবে মনোযোগ দেয়, তবে তার অন্তরে এক প্রাকৃতিক টান সৃষ্টি হয়, যা তাকে আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ করে এবং অবাধ্যতা থেকে দূরে রাখে।

আল্লাহর হিদায়াতের বৈচিত্র্য ও প্রজ্ঞা
আয়াতুল্লাহ খুশখওয়াকত বলেন,  “আল্লাহর দিকনির্দেশনা (হিদায়াত) একঘেয়ে বা যান্ত্রিক নয়। বরং আল্লাহ নানা উপায়ে, নানারূপে মানুষকে পথ দেখান। কখনো শিক্ষা, কখনো পরীক্ষার মাধ্যমে, কখনো ভালোবাসা বা ভয় জাগিয়ে তিনি মানুষের হৃদয়ে আলো জ্বালান। এভাবেই মানুষ প্রবৃত্তির শক্ত টান থেকেও আল্লাহর আদেশের পথে অগ্রসর হয়।”

এই হিদায়াতের ফলেই মানুষ ধীরে ধীরে অবাধ্যতা থেকে সরে আসে এবং আনুগত্য, বিনয় ও নৈতিকতার পথে এগিয়ে যায়।

আল্লাহর আনুগত্য কোনো জবরদস্তির বিষয় নয়; বরং এটি হৃদয়ের স্বীকৃতি, বিবেকের জাগরণ এবং ঈমানের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিফলন। মানুষের প্রবৃত্তি হয়তো বারবার তাকে বিচ্যুত করতে চাইবে, কিন্তু আল্লাহর আয়াতসমূহ, তাঁর রহমত ও নৈতিক দিকনির্দেশনা মানুষকে সত্যপথে ফিরিয়ে আনে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তার জন্য পথ সহজ করে দেন।” (সূরা আল-লায়েল, আয়াত ৭–১০)

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha