হাওজা নিউজ এজেন্সি: গিলান প্রদেশের রুদসার ও আশকুরাত অঞ্চলের আলেম ও শহীদ আলেমদের স্মরণে আয়োজিত সম্মেলনে প্রদত্ত এক বার্তায় তিনি বলেন, আলেম ও ফকীহ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গিলান প্রদেশের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। ইসলামী ঐতিহ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ, বিশেষ করে আলে বাবুয়ে যুগ থেকে যে জ্ঞানভাণ্ডার আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তা ওই অঞ্চল থেকেই সূচিত হয়েছে।
বার্তার মূল বক্তব্য
بسم الله الرحمن الرحیم
الحمد لله ربّ العالمین، و الصلاة و السلام علی سیدنا و نبیّنا أبیالقاسم المصطفی محمد، و علی أهل بیته الطیّبین الطاهرین، سیّما بقیّة الله فی الأرضین.
জ্ঞান ও আলেমদের মর্যাদা স্মরণে আয়োজিত এ সম্মেলন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান। কোনো সমাজ তখনই উন্নতি ও কল্যাণের পথে অগ্রসর হতে পারে, যখন তারা জ্ঞান ও আলেমদের গুরুত্ব দেয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে আশি’রও বেশি আয়াতে জ্ঞান ও আলেমদের প্রশংসা করেছেন এবং বিশেষ মর্যাদায় আসীন করেছেন। নবী করীম (সা.) বলেছেন, “আলেমগণ হচ্ছেন নবীদের উত্তরাধিকারী।”
আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর উক্তি, “আলেমরা মানুষের মাঝে আকাশের পূর্ণিমার চাঁদের মতো।” — এ কথাগুলো আলেমদের গুরুত্বকে সুস্পষ্ট করে।
গায়বাতের পর থেকে আলেমদের ভূমিকা
গায়বাতের যুগ থেকে আলেমরা সবসময়ই জনগণের আকীদা ও ঈমান রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তারা বিকৃতি ঠেকিয়েছেন, শয়তানি আক্রমণ প্রতিহত করেছেন এবং মানুষের বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রেখেছেন।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন,
“আমাদের শিয়া আলেমরা সীমান্ত প্রহরীর মতো। অপরপাশে অবস্থান করছে ইবলিস ও তার অনুসারীরা। আলেমরা শয়তানের আক্রমণ ঠেকায়, যাতে সে আমাদের শিয়াদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। জেনে রাখো! যে শিয়া এ দায়িত্ব পালন করবে, সে হাজার-হাজার মুজাহিদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা সে যুগে রোম বা খাজারদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে। কারণ সে আমাদের দ্বীন রক্ষা করে, আর অন্যরা কেবল প্রাণ রক্ষা করে।”
আজকের আলেমদের দায়িত্ব
আজও আলেমদের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুতর। যে আলেম জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তাদের সমস্যার প্রতি উদাসীন থাকে, জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীরব থাকে এবং মানুষের ধর্মীয় জীবন ও দুনিয়াবি সমস্যার গুরুত্ব দেয় না—সে প্রকৃত আলেম নয়। আলেমদের দায়িত্ব হলো মানুষের সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হওয়া। আর তা সম্ভব না হলে অন্তত তাদের পক্ষে আওয়াজ তোলা। অন্যথায় কোনো সুফল থাকবে না।
সব নবী, ওলী ও সত্যনিষ্ঠ আলেমরা এ দায়িত্ব পালন করেছেন। এর জ্বলন্ত উদাহরণ ইমাম খোমেনী (রহ.), যিনি কারাবাস, গৃহবন্দিত্ব ও নির্বাসন সহ্য করেছেন জনগণের প্রকৃত কণ্ঠস্বর হতে। তিনি আল্লাহর অনুগ্রহ ও জনগণের সহায়তায় এক মহান বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, জুলুম-অত্যাচারের ভিত্তি ধ্বংস করেছিলেন এবং পরাশক্তির কাছে মাথা নত করেননি। যাতে ইরানি জাতির মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে, তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
আজও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা একই পথ অনুসরণ করছেন। তিনি তাঁর সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন, যাতে ইসলাম ও ইরানের মর্যাদা অটুট থাকে এবং পুনরায় স্বৈরশাসন ফিরে না আসে।
গিলানের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য
গিলান প্রদেশ সর্বদা বিশিষ্ট আলেম ও ফকীহদের জন্ম দিয়েছে। ইতিহাসে যেমন আল-এ বুয়াহ যুগে আলেমদের কার্যক্রমের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, তেমনিভাবে সেখান থেকে বহু ইসলামী ঐতিহ্য প্রসার লাভ করেছে।
আমি নিজেও গিলান ও কুমে বহু ব্যক্তিত্বের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, যারা ছিলেন সম্মানিত ও প্রভাবশালী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: মরহুম যিয়াবেরী (রাশত), মরহুম রুহানি (রুদসার),
মরহুম যিয়ায়ী, যারা ছাত্র তৈরিতে ও জনগণের খেদমতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
এছাড়া মরহুম আয়াতুল্লাহ বেহজাত (রহ.), যিনি আমাদের যুগের এক মহৎ ফকীহ ছিলেন। তাছাড়া মাওলানা মাহফূযী, ফয়য লাহিজী, মুহাম্মদী গিলানী, ইহসানবখশ, শরীফী এবং আরও অনেক বিশিষ্ট আলেম, যাঁদের কোমে ও শাহের শাসনামলে সংগ্রামের সময় আমি কাছ থেকে দেখেছি। সেই অঞ্চলের শহীদ ছাত্রদের স্মৃতিও সর্বদা অম্লান থাকা উচিত।
আশকুরাত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য
ঐতিহাসিক গ্রন্থে আশকুরাত অঞ্চল বিশেষভাবে আলোচিত, কারণ সেখান থেকে বহু আলেম ও বিশিষ্ট ব্যক্তি বিভিন্ন জ্ঞানশাখায় উঠে এসেছেন এবং নাজাফ ও কুমের হাওযায়ে সুপ্রসিদ্ধ হয়েছেন। গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে—কীভাবে একটি দুর্গম অঞ্চল এমন আলেম গড়ে তুলল এবং এত গৌরবময় ঐতিহ্য অর্জন করল। এ কৃতিত্বের অন্যতম কারণ হলো সেখানকার জনগণের ধর্মনিষ্ঠা।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
শেষে আমি এ সম্মেলনের আয়োজকবৃন্দ, প্রদেশের ওয়ালিয়ে ফকীহ, ইমাম জুমা ও জামাআতের ইমামগণ, নির্বাহী কর্মকর্তাগণ এবং বিশেষত গিলান প্রদেশের রুদসার ও রহিমাবাদের ধর্মপ্রাণ ও বিপ্লবী জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবার জন্য মহান আল্লাহর কাছে তাওফিক কামনা করছি।
— আয়াতুল্লাহ হোসেইন নূরী হামেদানী
আপনার কমেন্ট