বুধবার ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ২২:৩৪
শিয়া বিশ্বব্যবস্থার সংস্কারের সন্ধানে

হাওযা / হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমোলি বলেছেন:শিয়াদের দায়িত্ব হলো বিশ্বব্যাপী প্রস্তুতি সৃষ্টি করা। এই দায়িত্ব গুরুতর, কারণ শিয়া বিশ্বব্যবস্থার সংস্কারের পথে রয়েছে। আর এই মহান দায়িত্ব পূরণ করা সম্ভব নয় যদি না শিয়ারা বিশ্বব্যাপী আলোচনায় কার্যকর উপস্থিতি রাখে এবং জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর প্রভাব ফেলে।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হযরত আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমোলির একটি রচনা প্রকাশিত হয়েছে যেখানে তিনি “ওَ نُصْرَتـی لَکُمْ مُعَدَّة حَتَّی یُحییَ اللّهُ تَعَالَی دِینَهُ بِکُمْ” (জিয়ারত জামেয়া কাবিরার একটি অংশ) এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর শিরোনাম: “শিয়াদের দায়িত্ব বিশ্বব্যাপী প্রস্তুতি সৃষ্টিতে”।

অংশ এক:

আহলে বাইত (আ.)-এর সাহায্যের জন্য প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর বিশ্বব্যাপী মাত্রা এবং এ ক্ষেত্রে শিয়াদের বিশ্বজনীন দায়িত্ব। নিঃসন্দেহে, শিয়াচিন্তা—যা মাহদাবাদ ও আগমনের বিশ্বাসের উত্স—এই বিশ্বাস প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব বহন করে। আজকের দিনে, একদিকে সীমাহীন ও দ্রুত বার্তা আদান-প্রদানের প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং অন্যদিকে মানবসমাজের পরিত্রাণমূলক ও ভবিষ্যতগঠনের এক মুক্তিদায়ক চিন্তার প্রয়োজনীয়তা, উভয় মিলেই “প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তার আবির্ভাব”-এ বিশ্বাসকে এক বিশ্বজনীন ধারণা হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত করেছে। এ কারণে শিয়ানেতাদের ও বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব আরও ভারী হয়েছে।

আজ বিশ্বে শিয়াচিন্তার প্রভাব এবং অবস্থান এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, নিজেদের মৌলিক আদর্শের উপর ভর করে শিয়াসমাজ বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং বিশ্বকে প্রতিশ্রুত মসীহা হযরত মাহদী (আ.জ.)-এর আবির্ভাবের উপযুক্ত করার প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে।

আহলে বাইতের অনুসারীরা (আ.) যেহেতু “প্রত্যাশা”র চিন্তা ব্যাখ্যা ও প্রচার এবং বৈশ্বিক মাহদাভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বহন করছে, তাই এ ক্ষেত্রে তাদের নিজেকেই অগ্রণী ও প্রস্তুত থাকতে হবে। এ প্রস্তুতির অর্থ হলো শিয়াদের চিন্তাগত, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে কার্যকর উপস্থিতি। তখনই তারা মাহদাবাদী ধারণাকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করার জন্য নিজেদের এই ঐশী দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবে।

শিয়াসমাজ যদি সঠিকভাবে প্রয়োজনগুলো উপলব্ধি করে, প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে এবং গঠনমূলক ব্যবস্থাপনা করে, তাহলে বর্তমান অনুকূল পরিস্থিতিকে মূল্যবান সুযোগে রূপান্তর করতে পারবে। আর মেহদিয়্যাত তত্ত্ব ও ইসলামী বৈশ্বিক ন্যায়বিচারী সরকারের আকর্ষণ ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে এটিকে সর্বোত্তম আদর্শব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারবে, যা সমগ্র মানবজাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

অংশ দুই:

শিয়াদের বিশ্বব্যাপী প্রস্তুতি সৃষ্টির দায়িত্ব ভারী হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, শিয়ারা বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন ও সংস্কারের পথে রয়েছে। এই গুরুদায়িত্ব পূরণ সম্ভব নয় যদি না তারা বৈশ্বিক আলোচনায় কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করে এবং সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর প্রভাব ফেলে।

আজকের বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, এই ইসলামি ও শিয়াচিন্তা—বিশ্বজনীন ন্যায়ভিত্তিক সরকারের বিশ্বাস—মানুষের মন ও চিন্তায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত। নিঃসন্দেহে, যদি এই আদর্শগত বিশ্বাস সঠিকভাবে মানুষের বোধগম্য করা যায়, তবে তা সব ভৌগোলিক ও কৃত্রিম সীমা অতিক্রম করবে, সত্যসন্ধানী হৃদয়কে জয় করবে এবং আধুনিক মানবজাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

কারণ সমসাময়িক মানবজাতির ভবিষ্যৎ সভ্যতার প্রতি দৃষ্টি—যেখানে দুশ্চিন্তা ও আশার মিশ্রণ রয়েছে—বিশ্বে মৌলিক পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। একদিকে তথ্যপ্রযুক্তির অসাধারণ অগ্রগতি বৈশ্বিক বার্তা প্রচারকে অত্যন্ত সহজ করেছে। অন্যদিকে বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া—যেখানে ধারণা, সংস্কৃতি, চাহিদা ও উদ্বেগ একত্রিত হচ্ছে—মানবজাতির দীর্ঘদিনের সেই আকাঙ্ক্ষিত আদর্শে পৌঁছানোর জন্য মতবাদ ও চিন্তাধারার প্রতিযোগিতার মঞ্চ তৈরি করেছে। সেই চিরন্তন আদর্শ, যা মানুষের সাথে ইতিহাসের শেষ পর্যন্ত একসাথে পথ চলবে।

সূত্র:

অংশ এক: আদব ফানায়ে মুকাররাবান, খণ্ড ১০, পৃ. ২০২–২০৩

অংশ দুই: আদব ফানায়ে মুকাররাবান, খণ্ড ১০, পৃ. ২০৫

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha