শনিবার ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ০৯:০৩
ঐক্যের নামে আনুগত্যের ভান, বাস্তবে বিভাজনমূলক কার্যকলাপ

মজলিসে খোবরেগানে রাহবারির সদস্য হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাঈদ সালেহ্ মির্জায়ী বলেছেন, “সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহুল উজমা খামেনেয়ীর ঐক্য সংরক্ষণের সুস্পষ্ট নির্দেশনার ক্ষেত্রে কিছু লোক বাহ্যিকভাবে সাম‘আন ও তা‘আতান (শ্রবণ ও আনুগত্য) বলে থাকলেও বাস্তবে তারা বিভেদমূলক আচরণ চালিয়ে যাচ্ছে।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ঐক্যের গুরুত্ব নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, “এই পবিত্র ঐক্য, এই মহৎ সমাবেশ, মানুষের হৃদয় ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থেকে গড়ে ওঠা এই ইস্পাত-দুর্গে কোনো আঘাত আসা উচিত নয়। আলহামদুলিল্লাহ, আজ দেশে ঐক্য বিদ্যমান। জনগণ এই ঐক্য রক্ষা করবে। দেশের কর্মকর্তারা—বিশেষত তিন ক্ষমতার প্রধানেরা—যারা বর্তমানে ঐক্য ও সম্প্রীতির সঙ্গে কাজ করছেন, তারাও এটিকে অটুট রাখবেন। আর জনগণ দেশের সেবকদের সমর্থন করবে।”

কেন জনগণকে সরকার ও রাষ্ট্রপতিকে সমর্থনের আহ্বান জানানো হলো? সালেহ্ মির্জায়ী বলেন, ইমাম খোমেনী (রহ.) ও ইমাম খামেনেয়ীর দৃষ্টিতে জনগণ হলো ইসলামী বিপ্লবের মূল স্তম্ভ। কোনো অগ্রগতি বা পরিবর্তন জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। রাষ্ট্র পরিচালনা, বিশেষত নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। এটি সফল হতে হলে জনগণ ও প্রভাবশালী মহলকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যমিক সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, ১২ দিনের প্রতিরোধযুদ্ধে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে কীভাবে জনগণ, সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব একত্র হয়ে অতুলনীয় বীরত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই নিয়ামতের প্রতি শোকরিয়া প্রকাশের অন্যতম উপায় হলো সরকারের কাজে সহায়তা করা। এজন্যই রাহবার সম্প্রতি মজলিস সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “সরকারের সাফল্য মানেই আমাদের সবার সাফল্য।”

ইসরায়েলকে বয়কট করার প্রয়োজনীয়তা
রাহবার সম্প্রতি বলেছেন, “ইসরায়েলি দখলদারদের সাহায্যের সব পথ রুদ্ধ করতে হবে।”

এ প্রসঙ্গে সালেহ্ মির্জায়ী বলেন, ইমাম খোমেনী (রহ.) যথার্থই ইসরায়েলকে “ক্যান্সারের টিউমার” বলেছেন। এর স্বভাবই হলো ক্রমাগত বিস্তার ঘটানো। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসরায়েল সবসময় অধিক ভূমি দখলের চেষ্টা করেছে। গত দুই বছরে লেবানন ও সিরিয়ায় তাদের আগ্রাসনই এর প্রমাণ। সম্প্রতি নেটানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছে: “আমি ঈশ্বরীয় দায়িত্ব নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েলের জন্য লড়াই করছি, এটি আমাদের অস্তিত্বের যুদ্ধ।”

তিনি বলেন, ইসরায়েলের পতনের প্রধান উপায় হলো তার জীবনরস—জ্বালানি ও কৌশলগত পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করা। এতে দখলদারদের জীবন দুর্বিষহ হবে, উল্টো অভিবাসন শুরু হবে এবং শেষমেশ তারা ফিলিস্তিনি গণভোটে বাধ্য হবে। কিন্তু অধিকাংশ সরকার আমেরিকার চাপের মুখে ইসরায়েলকে ছাড় দেয়। তাই তাদেরকে বয়কটে বাধ্য করতে হলে জনগণের চাপ অপরিহার্য। জনগণকে জাগ্রত করার গুরু দায়িত্ব আলেম, চিন্তাবিদ ও প্রভাবশালী মহলের ওপর বর্তায়।

ঐক্য নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ
রাহবার সতর্ক করে বলেছেন, “১২ দিনের যুদ্ধে শত্রুর পরাজয়ের পর তাদের প্রধান কৌশল হলো বহুস্বর সৃষ্টি করে ঐক্য নষ্ট করা।”

সালেহ্ মির্জায়ী বলেন, “নির্বাচনী মানসিকতা ও দলীয় গোষ্ঠীবাদ জাতীয় ঐক্যের জন্য বড় হুমকি। মনে হয় কিছু লোকের কাছে নির্বাচনের পরের ‘শনিবার’ এখনো আসেনি। তারা রাহবারের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও বিভেদমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছে।”

তিনি যোগ করেন, “কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে রাহবারের বক্তব্য বিকৃত করে সরকারকে ঐক্য ভাঙার দায়ী হিসেবে উপস্থাপন করে এবং নিজেদের ধ্বংসাত্মক কাজকে সমালোচনা বলে চালায়। অবশ্যই রাষ্ট্রপতি ও সরকারি কর্মকর্তাদের উচিত রাহবারের সমর্থনের প্রতি বাস্তব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং বিভাজনকারীদের হাত শক্তভাবে রোধ করা, বিদ্রূপকারীদের জিহ্বা থামানো।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha