মাশহাদে হাওজা নিউজ এজেন্সি'র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নবীদের ভূমিকা মানুষের জন্য একজন শিক্ষকসুলভ। পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে: فَبَعَثَ اللهُ النَّبِیِّینَ مُبَشِّرِینَ وَ مُنْذِرِینَ وَ أَنْزَلَ مَعَهُمُ الْکِتَابَ بِالْحَقِّ
অর্থাৎ, যদি নবীরা প্রেরিত না হতেন, মানবজাতি কখনোই পরিপূর্ণতার কোনো স্তরে পৌঁছাতে পারত না। জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন কিংবা জ্যামিতি—সব জ্ঞানের উৎস নবীদের শিক্ষাই।
তিনি বলেন, এমনকি মৃতদেহ দাফনের পদ্ধতিও মানবজাতি নবীদের শিক্ষার মাধ্যমে শিখেছে। যেমন কোরআনে এসেছে, কাবিল যখন হাবিলকে হত্যা করে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন যা মাটিতে কিছু চাপা দিয়ে তাকে দাফনের পদ্ধতি শেখাল।
সকল নবীর মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.) শ্রেষ্ঠ
হুজ্জাতুল ইসলাম রাশেদইয়াজদি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তিনি এমন পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা প্রদান করেছেন যা মানবজাতিকে পরবর্তীতে আর কোনো নবীর প্রয়োজন থেকে মুক্ত করেছে।
তিনি যোগ করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনদর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠা। তিনি শুধু কথায় নয়, কর্মে মুসলমানদের একতাবদ্ধ করেছেন এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় উৎসাহিত করেছেন।
ঐক্য – বিজয়ের চাবিকাঠি
তিনি কোরআনের আয়াত
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ وَ الَّذِینَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَی الْکُفَّارِ رُحَمَاءُ بَیْنَهُم
উদ্ধৃত করে বলেন: উম্মাহকে কোরআনের নির্দেশ মেনে চলতে হবে:
وَ اعتَصِموا بِحَبلِ اللهِ جَمیعًا وَ لاتَفَرَّقوا
অর্থাৎ সবাই মিলে আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধরো এবং বিভাজিত হয়ো না। কারণ বিভাজন শুধু দুর্বলতা ও হতাশা ডেকে আনে।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি দুজন মানুষ হাত মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করে, তারা উভয়েই সফল হয়। ইসলামের শুরুর যুগে ঐক্যই ছিল মুসলমানদের বিজয় ও শক্তির মূল রহস্য। আজও আমাদের উচিত সেই সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে ঐক্যের সুযোগগুলো কাজে লাগানো।
নবীদের শিক্ষা – সভ্যতার ভিত্তি
হুজ্জাতুল ইসলাম রাশেদইয়াজদি বলেন, মানুষের জীবনযাপনের কলা শিখিয়েছে নবীরাই। যদি তারা না আসতেন, আমরা আজও গুহায় বাস করতাম, প্রাসাদে নয়। এ সকল অগ্রগতি আসলে নবীদের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ। যেমন কোরআনে বলা হয়েছে:
«یَا أَیُّهَا الَّذِینَ آمَنُواْ استَجِیبُواْ لِلهِ وَ لِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاکُم لِمَا یُحیِیکُم»
হে ঈমানদারগণ! যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদের ডাকে সেই দিকে যা তোমাদের জীবন দান করে, তখন সাড়া দাও।
তিনি আরও বলেন, মানবজাতির প্রয়োজনীয় সবকিছুই নিহিত রয়েছে নবী শেষুল-আম্বিয়া (সা.)-এর সুন্নতে। তিনি দুটি চিরস্থায়ী আমানত রেখে গেছেন—কোরআন ও আহলে বাইত—যাতে যুগে যুগে মানুষ পূর্ণতা ও সফলতার পথ খুঁজে পায়।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নবীদের সীলমোহর। তাঁর জীবন আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি যে পরিপূর্ণতার পথ অতিক্রম করেছেন, সেটিই কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির পথনির্দেশ।
শেষে তিনি বলেন, আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়, বরং সত্যিকার অর্থে জীবন যাপনের জন্য এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য।
আপনার কমেন্ট