হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইয়াসিন মুসাভি বরাবরের মতই তার জুমার খুতবায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ও সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক করেন।
পশ্চিমা প্রকল্প ও ইরাকি রাজনীতিবিদদের সমালোচনা
খুতবার শুরুতে তিনি কিছু ইরাকি রাজনীতিবিদকে সমালোচনা করে বলেন, “দুঃখজনকভাবে তাদের অনেকেই বাস্তবতা অনুধাবনে ব্যর্থ। বরং তারা এমন কিছু সন্দেহজনক উৎসের প্রভাবে রয়েছে, যেগুলো আমেরিকা, ব্রিটেন ও জায়নিস্ট গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।”
নির্বাচনের গুরুত্ব: ব্যক্তিগত ইচ্ছা নয়, বরং ভাগ্য নির্ধারণী সংগ্রাম
তিনি বিশেষভাবে ইরাকি যুবকদের উদ্দেশে বলেন, “নির্বাচনে অংশগ্রহণ কোনো ব্যক্তিগত বা রুচিগত বিষয় নয়; বরং এটি হক ও বাতিলের মধ্যকার ভাগ্য নির্ধারণী লড়াই। জনগণকে সচেতনভাবে ভোট দিয়ে ধর্মীয় ও জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং দেশের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে হবে।”
আমেরিকা-ইসরায়েলের কৌশল অপরিবর্তিত
আয়াতুল্লাহ মুসাভি সতর্ক করে বলেন, “ঘটনাবলিকে ব্যক্তিত্ব বা নামের সঙ্গে যুক্ত করা ভুল। কারণ, নেতৃত্ব বদলালেও আমেরিকা ও জায়নিস্টদের নীতি অপরিবর্তিত থাকে। তারা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক কাঠামো নতুনভাবে সাজাতে এবং শেষ পর্যন্ত ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।”
আঞ্চলিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
১. লেবাননে সমীর জাজা’র বক্তব্য
সম্প্রতি লেবাননে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে লেবানিজ ফোর্সেস নেতা সমীর জাজা শিয়াদের উদ্দেশে বলেন, তারা যেন “প্রতিরোধ ত্যাগ করে সাধারণ জীবনে ফিরে আসে।”
আয়াতুল্লাহ মুসাভি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “অতীতের রক্তাক্ত অপরাধে জড়িত এক মিলিশিয়া নেতা কীভাবে শিয়াদের উপদেশ দিতে সাহস পায়? এ ধরনের বক্তব্য আসলে শিয়াদের ঐক্য দুর্বল করার লক্ষ্যেই দেওয়া হচ্ছে। অথচ লেবাননের শিয়ারা আজ ঐক্যবদ্ধ ও সশস্ত্র, যা জায়নিস্ট হুমকির বিরুদ্ধে অটল প্রাচীর।”
২. কাতারে হামাস প্রতিনিধিদলের ওপর হত্যাচেষ্টা
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কাতারে হামাসের শীর্ষ আলোচক দলের ওপর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছিল। যদিও এ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে, তবে এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কিছু পক্ষ সরাসরি জায়নিস্টদের সঙ্গে জড়িত। যদি এ পরিকল্পনা সফল হতো, তবে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য ব্যাপকভাবে পাল্টে যেত।
আমেরিকার মিত্রতা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা
তিনি ইরাকের কিছু রাজনীতিবিদকে সমালোচনা করে বলেন “অনেকে মনে করে আমেরিকা তাদের প্রকৃত মিত্র। অথচ আমেরিকা তার নিকটতম সহযোগীকেও বিশ্বাস করে না। কাতারের ঘটনাই প্রমাণ করেছে, এমনকি আরব মিত্রদের মধ্যেও পারস্পরিক অবিশ্বাস তীব্র।”
ইরাকের সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নের প্রয়োজন
আয়াতুল্লাহ মুসাভি জোর দিয়ে বলেন “ইরাকের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। নির্বাচনী প্রার্থীরা স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে এবং একটি শক্তিশালী জাতীয় সেনাবাহিনী গড়ে তোলার চেষ্টা করবে, যাতে ইরাক স্বাধীনভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।”
তিনি সমালোচনা করে আরও বলেন, “দেশ পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা প্রয়োজন। কেবল মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়া বাস্তব উন্নয়নের বিকল্প হতে পারে না।”
খুতবার শেষাংশে তিনি জনগণকে সতর্কতা, ঐক্য ও সাহসিকতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আজকের সংগ্রাম হলো আলী (আ.)-এর শিয়াদের সঙ্গে আলী (আ.)-এর শত্রুদের সংগ্রাম। তাই এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে, যা শুধু শিয়াদের নয়, বরং সমগ্র ইসলামী উম্মাহকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।”
আপনার কমেন্ট