হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আলী রেজা আরাফি, দেশের হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক, কুম প্রদেশের পুলিশ প্রধানের সাথে সাক্ষাতে "আইনশৃঙ্খলা সপ্তাহ" উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে এ বাহিনীর সংগ্রামের প্রশংসা করেন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের ১৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা এবং বাহিনীর মানসিক দৃঢ়তা ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আরও বলেন: আমরা মহান ইমাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার শহীদ এবং শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের উজ্জ্বল আত্মার প্রতি সালাম জানাই। আমরা আশা করি আল্লাহ তাদের পরিবারকে ধৈর্য ও প্রশান্তি দান করবেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করবেন।
১৫০০ বছর পূর্তিতে মহানবী (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব পুনরাবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা
হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক বলেন: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের ১৫০০ বছর পূর্তি সামনে। এই উপলক্ষে প্রত্যাশা করা হয় যে, সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নবী করিম (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব পুনরায় উপস্থাপনের জন্য বিশেষ কর্মপর্ব শুরু করবে। এমন কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে হবে যাতে সমাজে নবীর পরিচয় তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম এবং সকল ঐশী গুণের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি আল্লাহর সব নাম ও গুণের প্রতিফলন, তাই তাঁর মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এ পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে।
আয়াতুল্লাহ আরাফি "لَقَدْ کانَ لَکُمْ فی رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ" আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন: এই আয়াত স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সমগ্র মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ আদর্শ—ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক আচরণ, শান্তি ও যুদ্ধ—সবক্ষেত্রে তিনি নিখুঁত অনুসরণীয়।
তিনি আরও বলেন: তবে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের আশা রাখে এবং জীবনে আল্লাহকে স্মরণ করে, তাদের জন্যই এ আদর্শ থেকে বেশি সুফল মেলে। কষ্ট-দুর্দশায় ধৈর্যধারণ ঈমানদারদের চরিত্রের গভীরতার প্রতিফলন, এবং ঈমানী সমাজকে এ ধরনের প্রতিরোধশক্তি দ্বারা সুসজ্জিত হতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি ও দৃঢ়তার প্রশংসা
হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক বলেন: দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বাহিনী শক্তিশালী, সাহসী ও প্রশংসার যোগ্য। বিশেষভাবে সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধে আপনাদের সংগ্রাম ও প্রতিরোধের প্রশংসা করতে হয়; যেখানে জনগণ ও ঐশী মূল্যবোধ রক্ষায় আপনাদের দৃঢ়তা ও সাহসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।
সামাজিক সমস্যার সমাধান-সব প্রতিষ্ঠানের যৌথ দায়িত্ব
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: সামাজিক সমস্যার দায় শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়; সাংস্কৃতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা, বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানসহ জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে। কুম শহরকে সামাজিক সমস্যার হ্রাসে অগ্রগামী হতে হবে, যাতে এটি সবচেয়ে কম সমস্যাপ্রবণ শহরে পরিণত হয়।
তিনি আরও বলেন: হিজাব ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে উদাসীন হওয়া উচিত নয়। কুম এ বিষয়ে আলাদা মর্যাদা ধরে রাখবে। হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা.)-এর পবিত্র হারাম এবং এ শহরের বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক মর্যাদা রক্ষা করা বড় দায়িত্ব। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা জরুরি, এবং এর ভিত্তি তৈরি করতে হবে বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে।
আয়াতুল্লাহ আরাফি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন: গবেষণানির্ভর প্রতিটি কাজ সফল হয়। শ্রোতাদের সঠিকভাবে চেনা এবং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়ন কার্যক্রমকে গভীরতা দেয়। এ পথে বিনিয়োগ অপরিহার্য।
তিনি বলেন: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৈনিক থেকে শুরু করে কমান্ডার পর্যন্ত সবার মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক স্তর উন্নত হওয়া উচিত। এ দিকের যত্ন প্রযুক্তিগত দক্ষতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাহিনীর সুস্থতা সমাজের জন্য আশা সঞ্চার করে।
নিরস্ত্র প্রতিরক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি মনোযোগ
তিনি সাম্প্রতিক ১২ দিনের আরোপিত যুদ্ধে কিছু দুর্বলতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন: উচ্চ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও "নিরস্ত্র প্রতিরক্ষা" ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ প্রয়োজন। এ খাতে বড় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে দুর্বলতাগুলো দূর হয়।
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: ইরান বিশ্বের একমাত্র জাতি যে জায়নিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। বিদেশ সফরে, বিশেষত সাম্প্রতিক মালয়েশিয়া সফরে, আলেমদের পোশাককে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে-যা ইরানি জাতির মহিমা, প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব ও দেশের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রতিফলন।
শেষে তিনি বলেন: বর্তমান অবস্থা বিশেষ ধরনের-একদিকে বড় সুযোগ, অন্যদিকে বড় হুমকি। এ অবস্থায় প্রতিরোধ, পুনর্গঠন এবং অগ্রগতির বাইরে আর কোনো পথ নেই, যেমনটি সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসলামী ব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ এবং দেশের আশা ও উদ্দীপনার চালিকাশক্তি, যা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের মাঝে প্রতিফলিত হতে হবে।
সাক্ষাতের শুরুতে কুম প্রদেশের পুলিশ প্রধান জেনারেল মীরহিদারি কর্মকাণ্ড ও কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
আপনার কমেন্ট