হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামের ইতিহাসে ইমাম মূসা কাজিম (আ.) এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-এর যোগ্য সন্তান এবং আহলে বাইতের ইমামদের ধারাবাহিকতার সপ্তম নক্ষত্র। তাঁর জীবন ছিল ইবাদত, জ্ঞানচর্চা, ধৈর্য ও মানবতার জন্য আত্মনিবেদনপূর্ণ। শুধু জীবদ্দশায় নয়, মৃত্যুর পরও তাঁর আধ্যাত্মিক মর্যাদা ও প্রভাব সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
ইমাম শাফেয়ীর স্বীকৃতি
প্রসিদ্ধ আলেম ইবনে সামউন (মৃত্যু: ৩৮৭ হিজরি) তাঁর গ্রন্থ আমালিয়ে ইবনে সামউন-এ ইমাম শাফেয়ীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন: শাফেয়ী বলতেন: মূসা কাজিম (আ.)-এর কবর হচ্ছে ‘আল-তিরয়াকুল মুজাররাব’ (অভিজ্ঞতালব্ধ প্রতিষেধক ওষুধ)।
এই উক্তি দ্বারা বোঝা যায় যে, ইমাম শাফেয়ীর দৃষ্টিতে ইমাম মূসা কাজিম (আ.)-এর কবর আধ্যাত্মিক চিকিৎসার জন্য এক পরীক্ষিত আশ্রয়স্থল।
‘তিরয়াকুল মুজাররাব’-এর তাৎপর্য
‘তিরয়াকুল মুজাররাব’ শব্দবন্ধটি আরব সমাজে একটি প্রচলিত প্রবাদ। এর দ্বারা বোঝানো হয় এমন প্রতিষেধক, ওষুধ বা উপায়, যা অভিজ্ঞতালব্ধভাবে সর্বদা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যখন কোনো বস্তু বা আশ্রয়ের কার্যকারিতা শতভাগ প্রমাণিত হয়, তখন আরবরা তাকে ‘তিরয়াকুল মুজাররাব’ বলে অভিহিত করে।
অতএব, ইমাম শাফেয়ীর বক্তব্যের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয় যে, ইমাম মূসা কাজিম (আ.)-এর কবর থেকে আরোগ্য ও সমস্যার সমাধান পাওয়া এক নিশ্চিত বাস্তবতা।
তাওয়াসসুল ও আশ্রয়ের শিক্ষা
ইমাম শাফেয়ীর এই মন্তব্যের মূল তাৎপর্য হলো, ইমাম মূসা কাজিম (আ.)-এর কবর এমন এক আধ্যাত্মিক কেন্দ্র, যেখানে মানুষ তাওয়াসসুল করলে বা আশ্রয় নিলে আল্লাহর রহমতের দরজা উন্মুক্ত হয়। এটি শুধু কোনো কুসংস্কার নয়, বরং অভিজ্ঞতালব্ধ সত্য, যা যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ অনুভব করেছে।
ইমাম মূসা কাজিম (আ.)-এর জীবন ও শিক্ষা মুসলিম সমাজের জন্য যেমন দিশারী ছিল, তেমনি তাঁর কবরও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি ও আরোগ্যের উৎস হিসেবে স্বীকৃত। ইমাম শাফেয়ীর মতো একজন বিশিষ্ট আলেমের স্বীকৃতি এই সত্যকে আরও দৃঢ় করে তোলে। এটি প্রমাণ করে যে, আহলে বাইতের ইমামদের প্রতি সম্মান, তাদের সাথে তাওয়াসসুল এবং তাদের কবর থেকে বরকত আহরণ করা ইসলামের একটি স্বীকৃত বাস্তবতা।
উস্তাদ আয়াতুল্লাহ কাজবিনী
আপনার কমেন্ট