বৃহস্পতিবার ২ অক্টোবর ২০২৫ - ০৮:২০
হিজাব স্টাইল না ফ্যাশন ফাঁদ? সেক্যুলারাইজেশনের আড়ালে ধর্ম ও পরিবারের সংকট

ইসলামী সংস্কৃতিতে হিজাব কেবল একটি পোশাক নয়; এটি নারীসত্তার লজ্জাশীলতা, মর্যাদা ও পরিচয়ের প্রতীক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হিজাবকে বাণিজ্যিকীকরণ ও তথাকথিত ফ্যাশন-স্টাইলের আড়ালে মূল উদ্দেশ্য থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই হাওজা নিউজ এজেন্সি-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে—অনেক হিজাবি ব্লগার ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত পছন্দের নামে ধর্মকে সেক্যুলারাইজ করার চেষ্টা করছেন।

ধর্মকে ব্যক্তিগতকরণের চেষ্টা
বিভিন্ন হিজাবি ব্লগার সমালোচনার জবাবে বলেন—“আমার ধর্ম আমার ব্যক্তিগত বিষয়” অথবা “প্রত্যেকেরই নিজের ইচ্ছেমতো বেছে নেওয়ার অধিকার আছে”।
এই ধরনের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ধর্মকে একটি সমষ্টিগত ও সামাজিক বিধান থেকে সরিয়ে এনে ব্যক্তিগত ও আপেক্ষিক বিষয় হিসেবে সীমাবদ্ধ করার প্রবণতা স্পষ্ট হয়। এর ফলেই সময়ের সাথে সাথে সমাজে ধর্মীয় বিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেক্যুলার মানসিকতা স্বাভাবিক রূপ নেয়।

এই প্রবণতা মোকাবেলায় করণীয়
এ সমস্যার সমাধানে কয়েকটি মৌলিক পদক্ষেপ জরুরি—

১. স্থানীয় ও মৌলিক নকশাকে সমর্থন: ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির প্রভাব কাটাতে ইসলামি ও দেশীয় নকশায় তৈরি হিজাব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যা একদিকে আকর্ষণীয় হবে এবং অন্যদিকে হিজাবের মূল দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে।

২. গণমাধ্যমে স্পষ্ট নীতি প্রণয়ন: যেমন কেউ সামরিক পোশাক পরে নিজেকে সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিতে পারে না, তেমনি যারা ইসলামের মৌলিক বিধান মানেন না, তাদেরকে ‘হিজাবি রোল মডেল’ হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচার করা উচিত নয়।

৩. মিডিয়া সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার ও তরুণ প্রজন্মকে শেখাতে হবে কিভাবে “প্রচারমূলক চেহারা” আর “বাস্তব জীবনধারা” এর মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়।

৪. আধ্যাত্মিক ও অনুপ্রেরণামূলক রোল মডেল উপস্থাপন: ইতিহাস ও সমকালীন সমাজের ঈমানদার ও সফল নারীদের সামনে আনা জরুরি, যারা ভোগবাদী ব্লগারদের বিকল্প হতে পারেন।

৫. কৌশলগত সাংস্কৃতিক নীতি গ্রহণ: সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির একচেটিয়া দখল ভাঙা যায় এবং প্রকৃত ধর্মীয় মূল্যবোধকে জোরদার করা যায়।

আজ যদি আমরা হিজাব স্টাইল প্রবণতাকে অবহেলা করি, তবে আগামীকাল আমাদের সমাজে দেখতে হবে ভয়াবহ পরিণতি—প্রজন্মের মধ্যে বিভাজন, পরিবারে সংকট এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ধীরে ধীরে ক্ষয়।

কারণ ইসলামী সংস্কৃতিতে হিজাব কেবল পোশাক নয়; এটি আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য, লজ্জাশীলতা, মর্যাদা ও নারীর পরিচয়ের প্রতীক। এই প্রতীককে যদি খ্যাতি, ফলোয়ার বা ফ্যাশনের খেলায় নামিয়ে আনা হয়, তবে সমাজ তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক সম্পদ হারাবে। আর একবার এই সম্পদ ক্ষয় হলে, তা পুনর্গঠন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha