রবিবার ৫ অক্টোবর ২০২৫ - ২১:০৬
স্ন্যাপব্যাক সক্রিয় হওয়ায় কায়রো চুক্তির বৈধতা শেষ: আরাকচি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, “স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম” সক্রিয় হওয়ার পর তেহরান ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত কায়রো চুক্তি আর বৈধ থাকবে না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: রবিবার সকালে তেহরানে রাষ্ট্রদূত, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

আরাকচি বলেন, ইরান সবসময় ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করেছে, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক দাবি তোলায় সেই প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিক হুমকি ও স্ন্যাপব্যাক চাপ অতীতে কোনো ফল দেয়নি; বরং আলোচনার প্রক্রিয়া আরও জটিল করেছে।

“অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, ইরানের পরমাণু ইস্যুর সমাধান সামরিক উপায়ে নয়, বরং আলোচনাভিত্তিক কূটনৈতিক পথে সম্ভব,”— বলেন  আরাকচি।

তিনি আরও বলেন, ইউরোপের তিন দেশ মনে করেছিল স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম প্রয়োগ করে তারা কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে, কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়েছে। এই পদ্ধতি কূটনীতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখন আলোচনার ধরণ ও অংশগ্রহণকারীদের অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে, আসন্ন আলোচনায় ইউরোপীয় দেশগুলোর ভূমিকা ও কূটনৈতিক প্রভাব কমবে।

সংবাদমাধ্যমে ইরানের কথিত দাবি বা শর্ত হিসেবে যেসব তথ্য প্রচার করা হয়েছে, তা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে তেহরানকে জানানো হয়নি।

“সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমাদের আলোচনা কেবল পরমাণু ইস্যুকে কেন্দ্র করে ছিল, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবগুলো ছিল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। যদি সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হতো, তবে একটি কূটনৈতিক সমাধান পাওয়া সম্ভব ছিল।”

আরাকচি জানান, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো আলোচনাকে জটিল করেছে, তবে কূটনীতি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

“সামরিক হামলা ও স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম সক্রিয় হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। ভবিষ্যতের আলোচনা অবশ্যই আগের চেয়ে ভিন্ন হবে।”

আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ইরান সম্প্রতি সংস্থাটির সঙ্গে একটি নতুন প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

“পরিস্থিতির পরিবর্তন ও নিরাপত্তা হুমকির কারণে, বিশেষ করে পরমাণু স্থাপনায় হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, আগের সহযোগিতা কাঠামো কার্যকর রাখা সম্ভব ছিল না। কয়েক দফা আলোচনার পর কায়রোতে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়। তবে স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম সক্রিয় হওয়ায় কায়রো চুক্তি আর যথেষ্ট নয়; এখন নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

আরাকচি জোর দিয়ে বলেন, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ চরিত্র ও সদিচ্ছা প্রমাণে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

“ইরান পরামর্শ, সহযোগিতা ও গঠনমূলক প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর এখন আর ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বা সংলাপ এড়িয়ে যাওয়ার কোনো অজুহাত নেই। আমাদের অবস্থান সম্পূর্ণ বৈধ ও যুক্তিসঙ্গত। পারস্পরিক আস্থা ও স্বার্থ নিশ্চিত করতে পারে—এমন যেকোনো সমাধান অনুসন্ধানে ইরান প্রস্তুত।”

গত জুনে ইসরায়েল কর্তৃক আরোপিত যুদ্ধের প্রসঙ্গে আরাকচি বলেন, ১২০টিরও বেশি দেশ ও প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে ইরানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে।

“এই সমর্থনের মূল কারণ হলো—ইরানের প্রজ্ঞা, বাস্তববাদিতা ও দায়িত্বশীল আচরণ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ইরান সবসময় একটি দায়িত্বশীল ও আলোচনামুখী পক্ষ হিসেবে কাজ করেছে।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষে তিনি বলেন, “নিজস্ব অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি ইরান এমন যেকোনো সমাধান বিবেচনায় প্রস্তুত যা পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা করবে এবং আমাদের পরমাণু কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ চরিত্রের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha