হাওজা নিউজ এজেন্সি: রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (X)-এ প্রকাশিত এক পোস্টে আরাকচি বলেন, “শার্ম আল-শেখ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির আমন্ত্রণের প্রতি ইরান কৃতজ্ঞ। ইরান সবসময় কূটনৈতিক সম্পৃক্ততাকে বিশেষ মূল্যায়ন করে। তবে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান কিংবা আমি— কেউই এমন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে পারি না যারা ইরানি জনগণের ওপর হামলা চালিয়েছে, এখনো হুমকি দিচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এর পরও ইরান এমন যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানায় যা গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার অবসান ঘটাতে পারে এবং দখলদার বাহিনীর বহিষ্কার নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।”
আব্বাস আরাকচি জোর দিয়ে বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের মৌলিক অধিকার অখণ্ড ও অপরিবর্তনীয়। এই অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত এবং এটি মানবাধিকারের মৌল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আজকের বিশ্বে, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি প্রয়োজন যে সব রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য ও বৈধ সংগ্রামে সহায়তা করবে।”
আরাকচি আরও বলেন, “ইরান সবসময়ই এবং ভবিষ্যতেও এই অঞ্চলে শান্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে থাকবে। গণহত্যাকারী ইসরায়েলি শাসনের মতো ইরান কোনোভাবেই ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’-এর পক্ষে নয়— বিশেষ করে তথাকথিত মিত্রদের খরচে পরিচালিত যুদ্ধের পক্ষে নয়। বরং ইরান চায় ‘চিরস্থায়ী শান্তি’, ‘সমৃদ্ধি’ এবং ‘সহযোগিতা’। আমরা বিশ্বাস করি, যুদ্ধের অবসান ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠাই এ অঞ্চলের ভবিষ্যতের একমাত্র সঠিক পথ।”
আরাকচি তার বার্তায় আরও উল্লেখ করেন, “ইরান কখনো আগ্রাসনের পক্ষে নয়। বরং আমরা বিশ্বাস করি, সত্যিকার শান্তি অর্জনের একমাত্র উপায় হলো ন্যায়বিচার, পারস্পরিক সম্মান ও জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া। এই নীতির ভিত্তিতেই ইরান সর্বদা তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে আসছে।”
তিনি বলেন, “ইরান গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া বাড়াতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে আন্তর্জাতিক ঐক্য জোরদার করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, দখলদার বাহিনীকে প্রত্যাহার করতে হবে, ফিলিস্তিনের ওপর আরোপিত অবরোধ ভাঙতে হবে এবং মানবিক সাহায্য দ্রুত ও বাধাহীনভাবে প্রবেশ করতে দিতে হবে।”
শার্ম আল-শেখ শান্তি সম্মেলন সংক্রান্ত প্রেক্ষাপট
মিশরের উপকূলীয় শহর শার্ম আল-শেখ সোমবার থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করছে। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো এবং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে মানবিক সংকট প্রশমিত করা।
সম্মেলনটি যৌথভাবে পরিচালনা করবেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করবেন বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। সম্মেলনে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হওয়ারও কথা রয়েছে।
ইরান যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না, তবুও তেহরান স্পষ্ট করেছে যে, দেশটি শান্তি প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও এমন কোনো পক্ষের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করবে না যারা অতীতে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে আক্রমণ, হুমকি বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
আব্বাস আরাকচি তার পোস্টের শেষে লেখেন, “ইরান তার নীতিগত অবস্থান থেকে এক চুলও সরে যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি, এই অঞ্চলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়। ইরান সবসময়ই শান্তির জন্য কাজ করবে, তবে কখনোই আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে নয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ইরান এমন একটি ভবিষ্যৎ চায় যেখানে শান্তি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, উন্নয়ন ও সহযোগিতা থাকবে। আমরা ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’-এর নয়, বরং ‘চিরস্থায়ী শান্তি’-র পক্ষে। এটাই ইরানের পররাষ্ট্রনীতির প্রকৃত দর্শন।”
আপনার কমেন্ট