হাওজা নিউজ এজেন্সি: দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি আঞ্চলিক দেশের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীসমূহ ও ইসরাইলি দখলদার সরকারের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, তা পশ্চিম এশিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপ্রবাহে—বিশেষত ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সমঝোতা মূলত সীমিত যুদ্ধবিরতি ও আংশিক বন্দি বিনিময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দখলদার সরকারের দীর্ঘদিনের প্রতারণা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ইতিহাসের কারণে বিশ্লেষকরা একে অস্থায়ী ও ভঙ্গুর চুক্তি বলে মনে করছেন।
ইসরাইল: বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত সরকারে পরিণত
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়, যখন আন্তর্জাতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে—গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত, এবং হাজারো নিরীহ মানুষ, বিশেষত নারী ও শিশুরা, শহীদ হয়েছেন। উপরিভাগে এটি হামাসের পরাজয় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হলো “তুফানুল-আকসা”-পরবর্তী ঘটনাবলি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আজ ইসরাইল বিশ্বের অধিকাংশ জনগণ এবং বহু রাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও একঘরে শাসনব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে দখলকৃত ভূখণ্ডগুলোর ভেতরে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ চরম অস্থির, এবং গণমাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনার ঝড় বইছে।
স্থায়ী শান্তি অসম্ভব মূল সমস্যার সমাধান ছাড়া
বিশ্লেষকদের মতে, যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের দখল, গাজার অবরোধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক দিগন্ত উন্মোচিত না হবে, ততদিন কোনো চুক্তিই দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না।
গত দুই বছরে গাজার যুদ্ধ আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও জনমতের ক্ষেত্রে এক মোড় পরিবর্তন এনেছে। সাম্প্রতিক জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পশ্চিমা দেশগুলোতেও গাজার জনগণের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং একই সঙ্গে নেতানিয়াহু ও ইসরাইলি নেতৃত্বের প্রতি ঘৃণা তীব্র হয়েছে।
লক্ষ্যে ব্যর্থ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক পতন
ইসরাইল এই যুদ্ধে তার ঘোষিত কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি—গাজার জনগণকে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত করা, সামরিক উপায়ে বন্দিদের উদ্ধার করা কিংবা হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা—কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়া তাই এক অর্থে ইসরাইলি সরকারের পক্ষ থেকে পরাজয়ের স্বীকারোক্তি, যা তথাকথিত শক্তিশালী সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা ও দখলদার শাসনের নিঃসঙ্গতার প্রতীক।
এদিকে বন্দিদের মুক্ত করতে ব্যর্থতা, আঞ্চলিক অস্থিরতার বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক ও মানবাধিকারের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ায়, আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো বাধ্য হয়েছে যুদ্ধ থামাতে।
বৈশ্বিক ঘৃণার যুগে নতুন বাস্তবতা
আজ, আল-আকসা তুফান-পরবর্তী যুগে, যখন সিয়োনবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ঘৃণা চরমে, তখন বিশেষজ্ঞদের মতে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিবর্তনের গতি দিন দিন আরও বেশি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রবাহিত হচ্ছে—এবং এই বাস্তবতা থেকে তাদের কোনো পালাবার পথ নেই।
আপনার কমেন্ট