হাওজা নিউজ এজেন্সি: আব্বাস আরাকচি “পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ আন্দোলন: কাম্পালা সম্মেলনের প্রাক্কালে কিছু প্রতিফলন” শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লিখেছেন, “ইরানের জন্য নিরপেক্ষ আন্দোলন ন্যায়, সমতা ও বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কণ্ঠস্বর। কাম্পালায় আমরা আশা করি, এই সম্মেলন অভিন্ন স্বার্থ ও চ্যালেঞ্জের ভিত্তিতে কার্যকর সংহতি জোরদার করবে।”
নিরপেক্ষ আন্দোলনের তাৎপর্য
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় বর্তমানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিরপেক্ষ আন্দোলনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ১৯তম মধ্যবর্তী বৈঠক। এই বৈঠককে আরাকচি “বর্তমান জটিল আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ” বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “সম্মেলনের মূল বিষয় হলো ‘সার্বজনীন কল্যাণের জন্য সহযোগিতার গভীরতা বৃদ্ধি’। এখানে জাতিসংঘ সংস্কার, মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ ও উন্নয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হবে।”
আরাকচির মতে, নিরপেক্ষ আন্দোলন জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনার জীবন্ত প্রতীক, যা ইরানের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ইরানের ভূমিকা
আরাকচি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৫০–৬০ দশকে শীতল যুদ্ধের দ্বিমেরু বিশ্বে নিরপেক্ষ আন্দোলন এক “স্বাধীন কূটনৈতিক বিকল্প” হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
তিনি উল্লেখ করেন, “১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান এই আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হয় এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও বৈশ্বিক শাসন কাঠামোর গণতন্ত্রীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
বর্তমানে নিরপেক্ষ আন্দোলনে ১২০টি দেশ রয়েছে, যা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে। আরাকচি বলেন, “২০১২ সালের তেহরান সম্মেলনে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও একতরফা নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলা হয়—এটি ছিল আন্দোলনের ইতিহাসে এক মাইলফলক।”
গাজা যুদ্ধবিরতি ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি
গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে আরাকচি বলেন, “২০২৩ সাল থেকে চলা ইসরায়েলি গণহত্যায় ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি সেই রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের পর এক ভঙ্গুর শান্তির সুযোগ এনে দিয়েছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেন এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ব্যবহার করে ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পশ্চিমা প্রচেষ্টার নিন্দা জানান।
বহুমেরু বিশ্ব ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার
আরাকচি বলেন, “বড় শক্তিগুলোর অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা ও প্রযুক্তিগত বিভাজন বর্তমান বিশ্বকে আরও জটিল করে তুলেছে। ব্রিকসের মতো উদীয়মান কাঠামো পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে এবং বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গভীর সংস্কার দাবি করছে—যা নিরপেক্ষ আন্দোলনের ঐতিহ্যের সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ।”
তিনি একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে “অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ” বলে উল্লেখ করে বলেন, “এগুলো দক্ষিণের দেশগুলোর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে, তবে একই সঙ্গে দক্ষিণ–দক্ষিণ সহযোগিতা ও স্থিতিস্থাপকতাকে শক্তিশালী করেছে।”
কাম্পালা সম্মেলনে ইরানের প্রত্যাশা
আরাকচি আশা প্রকাশ করেন, কাম্পালা সম্মেলন ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি পুনর্ব্যক্ত করবে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দাবি করবে এবং অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানাবে। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি পেজেশকিয়ানের নেতৃত্বে ইরান গঠনমূলক বহুপাক্ষিকতার প্রতি আন্তরিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে অংশ নিচ্ছে, যাতে বৈশ্বিক দক্ষিণের সক্ষমতা বাস্তবভাবে বৃদ্ধি পায়।”
আরাকচি বলেন, “নিরপেক্ষ আন্দোলন আজও টিকে আছে কারণ এটি বিশ্বের নৈতিক ও জনসংখ্যাগত সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি জি–৭-এর মতো একচেটিয়া ক্লাবগুলোর বাস্তব বিকল্প।”
তিনি উপসংহারে যোগ করেন, “ইরান ন্যায়, সমতা ও বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কণ্ঠস্বর জোরালো করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কাম্পালা সম্মেলন সেই প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থা গঠনের পথে এগিয়ে নেবে।”
আপনার কমেন্ট