শুক্রবার ১৭ অক্টোবর ২০২৫ - ১৫:১২
নামাজকে হালকাভাবে নেওয়ার ভয়াবহ পরিণতি

নামাজ ইসলামের স্তম্ভ ও ঈমানের পরিচায়ক। এটি শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে আত্মিক সংযোগের জীবন্ত প্রকাশ। কিন্তু যখন কেউ এই মহান ইবাদতকে হালকাভাবে নেয়, তখন তার পরিণতি হয় অত্যন্ত ভয়াবহ — দুনিয়া, কবর ও আখিরাতে তাকে ভোগ করতে হয় করুণ শাস্তি। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি বাণীতে বর্ণিত হয়েছে নামাজকে তুচ্ছ করার ভয়াবহ পরিণতি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: একদিন হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) তাঁর প্রিয় পিতা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে আমার পিতা! যারা তাদের নামাজকে হালকাভাবে নেয়, তাদের পরিণতি কী হবে?”

রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তরে এমন এক হৃদয় কাঁপানো জবাব দিলেন— “হে ফাতিমা! পুরুষ হোক বা নারী, যে ব্যক্তি নামাজকে তুচ্ছ করে (অর্থাৎ সময় মত ও যথাযথভাবে আদায় না করে), আল্লাহ তাআলা তাকে ১৫টি শাস্তিতে আক্রান্ত করেন, যার—
• ৬টি দুনিয়াতে,
• ৩টি মৃত্যুর সময়ে,
• ৩টি কবরের ভেতরে, এবং • ৩টি কিয়ামতের দিনে।”

দুনিয়ার ছয়টি শাস্তি

১. আল্লাহ তার জীবন থেকে বরকত উঠিয়ে নেন।

২. তার রিজিক (জীবিকা) থেকে বরকত মুছে দেন।

৩. তার চেহারা থেকে ধার্মিকতার নূর ও মর্যাদা হারিয়ে যায়।

৪. তার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না।

৫. তার দোয়া আসমানে পৌঁছায় না।

৬. সে সৎ ও নেককার মানুষের দলে স্থান পায় না।

মৃত্যুর সময় তিনটি শাস্তি

১. সে অপমানিত অবস্থায় দুনিয়া ত্যাগ করে।

২. ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

৩. তৃষ্ণার্ত অবস্থায় প্রাণ ত্যাগ করে — যতই পৃথিবীর পানি দেওয়া হোক, তবুও তার তৃষ্ণা মেটে না।

কবরের তিনটি শাস্তি

১. এক ভয়াবহ ফেরেশতা তাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে শাস্তি দেয়।

২. তার কবর সংকীর্ণ ও ভারী করে দেওয়া হয়।

৩. সে কবর অন্ধকার ও আতঙ্কে নিমজ্জিত থাকে।

কিয়ামতের দিনের তিনটি শাস্তি

১. আল্লাহ এক ফেরেশতাকে আদেশ দেবেন, যেন সে ওই মানুষকে মুখ থুবড়ে টেনে নিয়ে যায়— আর সমগ্র মানবজাতি তা দেখে।

২. তার আমলের হিসাব অত্যন্ত কঠিনভাবে নেওয়া হবে।

৩. আল্লাহ তার দিকে দয়া ও রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না; বরং তার জন্য নির্ধারিত থাকবে চিরস্থায়ী শাস্তি।

সূত্র:
• ফালাহুস্‌সায়েল, পৃষ্ঠা ২২
• ফাতিমা (সা.)— মানবতার আদর্শ, পৃষ্ঠা ৭১

শিক্ষণীয় বার্তা
নামাজ কেবল একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়— এটি আত্মার খাদ্য, জীবনের বরকত, মৃত্যুর শান্তি এবং আখিরাতের মুক্তির পথ।

যে ব্যক্তি নামাজকে তুচ্ছ করে, সে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও রোষকে আহ্বান করে নিজের জীবন অন্ধকারে ঢেকে দেয়।

তাই আসুন, আমরা নামাজকে ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করি—সময়মতো আদায় করি, সন্তানদের হৃদয়ে নামাজের প্রেম জাগিয়ে তুলি এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে নিজেদেরকে প্রিয় বানিয়ে তুলি।

اللّهم اجعلنا من المقیمین الصلاة و من ذریاتنا
“হে আল্লাহ! আমাদের ও আমাদের সন্তানদেরকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”

নামাজ আমাদের শান্তির ছায়া, মুক্তির চাবি এবং জান্নাতের পথে প্রথম ধাপ।
নামাজকে ভালোবাসুন— নামাজ আপনাকে আল্লাহর ভালোবাসায় পৌঁছে দেবে।

লেখা: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আলী নওয়াজ খান

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha