হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম জুমা’র খুতবায় ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, “অল্প আমল যদি তাকওয়ার সঙ্গে থাকে, তবে তা তাকওয়াবিহীন অধিক আমলের চেয়ে উত্তম।”
(قليل العمل مع التقوى خير من كثير بلا تقوى)
[বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৬৭, পৃষ্ঠা ১০৬]
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম ইমাম সাদিক (আ.) ও মুফাজ্জেল ইবনে ওমর (রহ.)-এর ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, একদিন মুফাজ্জেল ইবনে ওমর (রহ.) ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-এর দরবারে এসে বিনয়ের সঙ্গে বলেন, “হে আমার ইমাম! আমার ভালো কাজ বা ইবাদতের সংখ্যা খুবই কম, এ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।”
ইমাম (আ.) তখন তাকে থামিয়ে বললেন, “হে মুফাজ্জেল! আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তুমি কি জানো না, আল্লাহর কাছে সেই আমলই অধিক প্রিয়, যার সঙ্গে তাকওয়া রয়েছে? আর সেই আমলই ঘৃণিত, যার মধ্যে তাকওয়া নেই।”
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়, যখন এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন— “হে ইমাম, কীভাবে কেউ অনেক আমল করতে পারে অথচ তার তাকওয়া না থাকে?”
তখন ইমাম (আ.) উত্তর দেন, “উদাহরণস্বরূপ, কেউ অনেক নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দান-সদকা করে; কিন্তু দরজা খুলে হারাম কাজে প্রবেশ করে, অন্যের অধিকার হরণ করে বা অন্যায় উপার্জনে লিপ্ত হয়— তার সেই সমস্ত আমল তাকওয়াহীন। আর অপরদিকে এমন কেউ একজন আছে, যে হয়তো বেশি আমল করতে পারে না, কিন্তু যখন গুনাহের সুযোগ আসে, সে আল্লাহভীতির কারণে তা থেকে বিরত থাকে— তার সেই অল্প আমলই আল্লাহর কাছে অধিক মূল্যবান।”
হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মাদ শরিফুল ইসলাম বলেন, “এই হাদিস আমাদের শেখায়—আমলের প্রকৃত সৌন্দর্য নিহিত থাকে তাকওয়ায়। যে আমলে তাকওয়া নেই, তা দেহের মতো, যার আত্মা নেই। কেবল নামাজ, রোজা বা দান করলেই ঈমান পরিপূর্ণ হয় না; বরং গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং নৈতিক সততা বজায় রাখাই সত্যিকারের ঈমানের প্রতিফলন।”
তিনি সমাজে বিদ্যমান ভোগবাদ, ঘুষ, সুদ ও অনৈতিক ব্যবসার প্রবণতা সমালোচনা করে বলেন, “অনেকে নিয়মিত ইবাদত করে, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে হারাম কাজে লিপ্ত থাকে। এ ধরনের দ্বিচারিতা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। আল্লাহর নিকট সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে তাকওয়াবান।”
তিনি আরও বলেন, “যে ব্যক্তি হয়তো বেশি ইবাদত করতে পারে না, কিন্তু হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকে, অন্যের অধিকার হরণ করে না এবং গুনাহ থেকে নিজেকে সংযত রাখে—সে-ই প্রকৃত মুমিন ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা।”
শেষে তিনি মুসলমানদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, “আমল বৃদ্ধি করার আগে তাকওয়া বৃদ্ধি করা জরুরি। তাকওয়াই হলো সেই আলো, যা আমলকে অর্থবহ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।”
আপনার কমেন্ট