রবিবার ২৬ অক্টোবর ২০২৫ - ১২:১৩
কোম শুধু একটি শহর নয়; এটি জ্ঞান, ধর্ম ও বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল

ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জামকারান মসজিদের মুতওয়াল্লি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ আলী আকবর এজাজনেজাদ কোম শহরের বহুমুখী গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে বলেছেন, কোম শহরটি ধর্মীয়, শিক্ষা, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকে অনন্য এবং এই দিকগুলো একে অপরের পরিপূরক।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: শনিবার ৩রা আবান ১৪০৪ (২৫ অক্টোবর) কোম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্থাপত্য ও নগরায়ন বিভাগ এবং কোম প্রদেশের বেসুজ ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিট-এর সহযোগিতায় “স্থাপত্য ও নগরায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে: জায়গা দর্শনের স্তরক্রম” শীর্ষক সেমিনারে তিনি বক্তৃতা দেন।

কোম শহরের গুরুত্ব
সাইয়্যেদ আলী আকবর এজাজনেজাদ বলেন, ঐতিহাসিক ও প্রাচীন দিক থেকে: কোম শহর সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও ইতিহাসের শহর।

রাজনৈতিক দিক থেকে: এটি ‘রক্ত ও বিদ্রোহের শহর’ হিসেবে পরিচিত।

শিক্ষার দিক থেকে: হাদিসে বলা হয়েছে, কোম থেকে জ্ঞান সমগ্র বিশ্বের দিকে ছড়িয়ে যায়।

শহরে শ্বাস নেওয়াও প্রতিদান হিসেবে গণ্য
তিনি আরও বলেন, কোম শহর আলে মুহাম্মাদ (সা.) পরিবারে সম্পর্কিত এবং হাদিসে উল্লেখ আছে যে, কোমে শ্বাস নেওয়াও এক ধরনের তসবিহের প্রতিদান। ফলে কোমের ধর্মীয়, শিক্ষা, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিশেষ।

ধর্ম, জ্বিঞান-জ্ঞান ও রাজনীতির সংমিশ্রণ
তিনি বলেন, কোমের শিক্ষা, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দিকগুলো একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। ইতিহাসে কিছু রাজা কোমে এসে ধর্মীয় জ্ঞানীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা প্রমাণ করে, রাজনীতি ও ধর্ম-বিজ্ঞান এখানে একত্রিত।

হুজ্জাতুল ইসলাম এজাজনেজাদ জোর দিয়ে বলেন, এই সংযোগ শহরের ক্ষতির কারণ নয়, বরং কোমকে সমৃদ্ধ করে।

কোমের ভবিষ্যতের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজন
তিনি প্রস্তাব করেন, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও নগরায়ন বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হোক, যা শহরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে। যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন মতামত বিবেচনা করে সেরা চিকিৎসা নির্ধারণ করা, তেমনই নগর উন্নয়নে বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি একত্রিত করা প্রয়োজন।

দায়িত্বশীলদের জানতে হবে তারা কোন শহরের জন্য দায়িত্ব পালন করছেন
তিনি বলেন, প্রশাসক, মেয়র ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তারা বোঝা উচিত তারা কোন শহরের জন্য দায়িত্বে আছেন। অনেক সময় নগরায়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো ঐতিহাসিক পরিচয়কে অবহেলা করে নেওয়া হয়, যা শহরের ক্ষতি করে।

কোমের ঐতিহাসিক পরিচয় পুনরুজ্জীবিত করা
হুজ্জাতুল ইসলাম এজাজনেজাদ উল্লেখ করেন, “বিদেশি অতিথিদের যখন কোমের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইতেন, তখন আমাদের প্রদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত কিছু ছিল না। ফলে আলোচনাকে ধর্মীয় দিকের দিকে নিয়ে যেতে হতো। অথচ, কোম ঐতিহাসিক দিক থেকেও সমৃদ্ধ।”

তিনি উদাহরণ দেন, “তাহলে সালাম টিলার মতো স্থানগুলো কোমের ঐতিহাসিক পরিচয়ের অংশ। এগুলো সংস্কার ও প্রচারের মাধ্যমে শহরের সাংস্কৃতিক মূল্য দ্বিগুণ করা সম্ভব।”

তিনি শহর প্রশাসন, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংস্থা এবং পাবলিক কালচার কাউন্সিলের মধ্যে যৌথ সভার প্রস্তাব দেন, যাতে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা শহরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

ঐতিহাসিক পরিচয় ও ধর্মের মধ্যে বিরোধ নেই
তিনি বললেন, “কোমের ইতিহাস পুনরুজ্জীবিত করা ধর্মের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে না, বরং ধর্মকে সমৃদ্ধ করে। ইতিহাস, জ্ঞান ও ধর্ম কোমে একে অপরের সঙ্গে সন্নিবেশিত। একটির শক্তি অন্যটিকে সমৃদ্ধ করে।”

শেষে তিনি গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়কর্মীদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, “জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর সমন্বয় দিয়ে কোমকে এমনভাবে উন্নয়ন করা সম্ভব, যাতে এর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। আশা করি, যৌথ কমিটি গঠিত হলে, শহরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তার প্রকৃত পরিচয়ের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হবে।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha