হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ সকালবেলায় ইমাম কাজিম (আ.) হাওজার সম্মেলন হলে আয়োজিত “মির্জা নায়িনি স্মারক কংগ্রেসে” বক্তৃতাকালে আয়াতুল্লাহ সুবহানি বলেন, এই মহান আলেমের বৈজ্ঞানিক ও নৈতিক মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। তিনি হাজার বছরের নাজাফ হাওজার ইতিহাস পর্যালোচনা করে বলেন, মির্জা নায়িনি হাওজার বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক জিহাদের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এই মহাসমাবেশের উদ্দেশ্য হলো এমন এক মহান আলেমকে সম্মান জানানো, যিনি ইসলামী ও শিয়া সমাজে অমূল্য অবদান রেখেছেন এবং নাজাফ শরিফের ফলপ্রসূ জ্ঞানবৃক্ষ থেকে বিকশিত হয়েছেন। এই অনুষ্ঠানটি নাজাফের হাওজা প্রতিষ্ঠার এক হাজার বছর পূর্তির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ; যা ১৪৭ হিজরিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আর আজ তার এক সহস্রাব্দ পূর্ণ হয়েছে।
আয়াতুল্লাহ সুবহানি আরও বলেন: নায়িনির জীবন ও রচনাসমূহ বিশ্লেষণের আগে নাজাফ হাওজার ইতিহাসের প্রতিও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। নাজাফ প্রথমদিকে একটি ছোট ও মরুপ্রধান শহর ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি এক বিশাল জ্ঞানকেন্দ্র ও আলেমদের বিকাশভূমিতে পরিণত হয়। এমনকি শায়খ তুসির হিজরতের আগেও নাজাফে আলেম ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিদ্যমান ছিল। ইবনে হাজ্জাজ বাগদাদি (মৃ. ৩৯১ হি.), যিনি শায়খ তুসির জন্মের সময় (৩৮৫ হি.) জীবিত ছিলেন, উল্লেখ করেছেন যে সেই সময়েও নাজাফে ইমামের হারামে কবিতা ও বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম বিদ্যমান ছিল।
এছাড়া, সাইয়্যেদ আব্দুল করিম ইবন তাবুস তাঁর “ফারহাতুল ঘারী” গ্রন্থে লিখেছেন, তিনি বাগদাদ থেকে নাজাফে এসে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য পাঁচ হাজার দিরহাম বরাদ্দ করেছিলেন-যা প্রমাণ করে যে সে সময় নাজাফে পাঠক ও ফকিহদের একটি সক্রিয় সমাজ ছিল।
তিনি বলেন: শায়খ তুসির বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাও উল্লেখযোগ্য। নিজ গ্রন্থাগারে অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি অনেক বই নাজাফে স্থানান্তর করেন এবং সেখানে মূল্যবান রচনাসমূহ, বিশেষত “তাফসির আত-তিবিয়ান”, সংরক্ষণ করেন। এটি বৈজ্ঞানিক সাধনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আয়াতুল্লাহ সুবহানি মির্জা নায়িনির মহৎ ব্যক্তিত্বের প্রশংসা করে বলেন: নায়িনি ছিলেন সংগ্রামী বুদ্ধিবৃত্তি ও সংকটকালের রাজনীতিবিদ-ফকিহের প্রতীক। তাঁর চিন্তাধারায় ফিরে যাওয়া মানে হলো যুক্তি, স্বাধীনতা ও আধ্যাত্মিকতার পথে ফিরে যাওয়া-যা ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে নিহিত। তাই এমন ব্যক্তিত্বদের সম্মান জানানো শুধু কর্তব্য নয়, বরং এটি ইসলামী সমাজ ও হাওজার পরিচয়ের ভিত্তি শক্ত করে।
তিনি বলেন: মির্জা নায়িনি ফিকহ, উসুল, কালাম ও হাদিসবিদ্যায় অসাধারণ প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন এবং নাজাফের সকল বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে গভীর প্রভাব রেখেছিলেন। তাঁর রচনাগুলো অভ্যন্তরীণ সামঞ্জস্য, সূক্ষ্ম যুক্তি ও ইজতিহাদের প্রাণবন্ত চেতনায় পরিপূর্ণ— যা আজও হাওজা ও গবেষকদের পথপ্রদর্শক। এমন মহৎ ব্যক্তিত্বদের স্মরণ তরুণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস, এবং ভবিষ্যতের হাওযা মির্জা নায়িনিদের মতো জ্ঞানী ও দূরদর্শী আলেমদের পথ অনুসরণ করেই অগ্রসর হবে।
আপনার কমেন্ট