হাওজা নিউজ এজেন্সি: যদি আমরা সত্যিই হযরত জয়নাব (সালামুল্লাহ আলাইহা)-কে ভালোবাসি, তবে আমাদের ভালোবাসা শুধু মুখের উচ্চারণে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। তাঁর প্রেমের দাবিদার হতে হলে আমাদের চরিত্রে তাঁর পবিত্রতা, লজ্জাশীলতা, সাহস ও সত্যের প্রতি অবিচল অবস্থান প্রতিফলিত হতে হবে।
আল্লামা মিসবাহ ইয়াযদি (রহ.) এক বক্তৃতায় গভীরভাবে প্রশ্ন তুলেছিলেন— “কীভাবে সম্ভব, কেউ হযরত জয়নাব (সা. আ.)-এর ভালোবাসার দাবি করবে, অথচ তাঁর জীবনের মৌলিক শিক্ষা—অভিজাত লজ্জাশীলতা ও সততা—তার জীবনে অনুপস্থিত থাকবে? কীভাবে সম্ভব, তাঁর অনুসারী হওয়ার কথা বলব অথচ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে ভয় পাব, আত্মত্যাগ করতে দ্বিধা করব? যদি আমরা সত্যিই তাঁকে ভালোবাসি, তবে আমাদের তাঁর মতোই হতে হবে।”
মানববিকাশের মনোবিজ্ঞানে “রোল মডেল” বা আদর্শের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃত। আদর্শ ছাড়া মানুষ দিকহীন, উদ্দেশ্যহীন ও অস্থির হয়ে পড়ে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বাস্তবতা কুরআনে প্রতিফলিত—যেখানে হযরত ইব্রাহিম (আ.), রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং অন্যান্য নবীদের জীবনকে অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
কিন্তু আজকের সমাজে তরুণ প্রজন্ম যেসব চরিত্র দেখে, সেগুলোর বেশিরভাগই গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র থেকে নেয়া। এই চরিত্রগুলো প্রায়শই বাহ্যিক চাকচিক্যে ভরপুর হলেও নৈতিকতা ও মূল্যবোধে শূন্য। তাই আমাদের উচিত, সত্যিকারের ইসলামী আদর্শ—যেমন হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) ও হযরত জয়নাব (সা.)—এর জীবনকে আধুনিক শিল্পমাধ্যমের মাধ্যমে উপস্থাপন করা।
তাজিয়া, নাটক, গল্প, চলচ্চিত্র বা সাহিত্য—যে মাধ্যমই হোক, উদ্দেশ্য একটাই: তরুণদের হৃদয়ে আদর্শচেতনা জাগ্রত করা। কারণ চরিত্র গঠনে আদর্শের চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই।
ইসলামের ইতিহাসে যদি নারীর শ্রেষ্ঠ দুটি আদর্শের নাম নেওয়া হয়, তবে নিঃসন্দেহে তারা হলেন হযরত ফাতিমা (সা. আ.) এবং হযরত জয়নাব (সা. আ.)। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ইসলামের চৌদ্দশত বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে এবং ইসলামী বিপ্লবের পরবর্তী কয়েক দশকেও আমরা এখনো এই দুই মহান নারীর প্রকৃত মর্যাদা ও শিক্ষার গভীরতা অনুধাবন করতে পারিনি।
আমাদের কর্তব্য কেবল তাঁদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ নয়, বরং তাঁদেরকে বিশ্বমানবতার সামনে নারীজগতের সর্বোচ্চ আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা। তাঁদের জীবন আমাদের শেখায়—পবিত্রতা দুর্বলতা নয়, সাহস মানে সত্যের জন্য ত্যাগ।
যদি আমরা সত্যিই হযরত জয়নাব (সা.আ.)-কে ভালোবাসি, তবে আমাদের তাঁর মতো হতে হবে— অবিচল, জ্ঞানী, সাহসী এবং ঈমানের আলোয় আলোকিত।
উৎস: আল্লামা মিসবাহ ইয়াযদি (রহ.)-এর বক্তৃতা, ১২/০২/১৩৭৮ সৌরবর্ষ (২ মে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ)
আপনার কমেন্ট