বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর ২০২৫ - ১৪:৫১
নারীর হিজাব: এক আল্লাহর বিধান— নারী, পুরুষ বা পরিবারের ইচ্ছাধীন বিষয় নয়

ইরানের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও মারজায়ে তাকলীদ আয়াতুল্লাহ আব্দুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি (দা.বা.) বলেছেন— “নারীকে বুঝতে হবে, তার হিজাব বা পর্দা কেবল তার ব্যক্তিগত বিষয় নয় যে সে বলতে পারে ‘আমি আমার অধিকার ত্যাগ করেছি’; এটি পুরুষের বিষয়ও নয় যে সে বলবে (আমার স্ত্রীর হিজাব না পরাতে) ‘আমি রাজি’; কিংবা পরিবারের বিষয়ও নয় যে পরিবারের সদস্যরা অনুমতি দিলেই তা (হিজাব বর্জন) বৈধ হয়ে যাবে। বরং হিজাব হলো একটি আল্লাহর বিধান, এটি তাঁরই অধিকার (হাক্কুল্লাহ)— যা কেবল আল্লাহরই ইচ্ছাধীন।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি তাঁর রচনা “হিজাব—একটি আল্লাহর অধিকার (বিধান)”-এ হিজাববিষয়ক প্রচলিত ভুল ধারণার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং যুক্তিসঙ্গত জবাব উপস্থাপন করেছেন।

হিজাবকে সীমাবদ্ধতা ভাবা এক ভুল ধারণা
তিনি বলেন, “কিছু লোক মনে করে, হিজাব নারীকে একটি সীমাবদ্ধ ঘেরাটোপে আবদ্ধ করে রাখে— যেন এটি পরিবারের চাপ বা স্বামীর কর্তৃত্বের ফল। তাই তাদের ধারণা, হিজাব মানে নারীকে দুর্বল বা অধীন করে রাখা। কিন্তু কুরআনের আলোকে এই চিন্তাধারা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।”

কুরআনের দৃষ্টিতে হিজাবের প্রকৃত ব্যাখ্যা
আয়াতুল্লাহ আমুলি বলেন, “নারীকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে যে, তার হিজাব কেবল নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয় নয়। সে বলতে পারে না ‘আমি চাই না, তাই পর্দা করব না’; পুরুষও বলতে পারে না ‘আমি রাজি, তাই আমার স্ত্রী বা বোন পর্দা ছাড়তে পারে’; কিংবা পরিবারও সম্মতি জানিয়ে এ বিধান পরিবর্তন করতে পারে না।

কারণ, নারীর হিজাব একটি আল্লাহর বিধান, এটি তাঁরই অধিকার (حق‌اللّه)— এটি মানবচিন্তা বা পারিবারিক রীতি দ্বারা পরিবর্তনযোগ্য নয়।”

নারীর মর্যাদা: আল্লাহর আমানত
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “নারীর মর্যাদা ও পবিত্রতা কেবল তার নিজের সম্পদ নয়; এটি তার স্বামী, ভাই বা সন্তানদেরও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। যদি তারা সবাই একত্রে (এটি বর্জনে) সম্মতও হয়, কুরআন তবু তাতে সন্তুষ্ট হবে না। কারণ, নারীর সম্মান ও মর্যাদা ‘হাক্কুল্লাহ’— আল্লাহর অধিকার ও বিধান হিসেবে নির্ধারিত।”

আল্লাহ নারীকে সৃষ্টি করেছেন অতুলনীয় মমতা, কোমলতা ও আবেগ দিয়ে, যাতে সে মানবসমাজে দয়ার দূত হয়ে ওঠে, মানবতার কাছে স্নেহ, সহমর্মিতা ও করুণার বার্তা পৌঁছে দেয়।

কিন্তু যখন কোনো সমাজ এই আবেগময় ও নৈতিক শিক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে শুধু কামনা-বাসনার অনুসরণে লিপ্ত হয়, তখন সেই সমাজে দেখা দেয় নৈতিক অবক্ষয় ও আত্মিক পতন, যার বাস্তব উদাহরণ আজকের পশ্চিমা সভ্যতা।

হিজাব অস্বীকারের অধিকার কারও নেই
তিনি বলেন, “কেউই বলতে পারে না—‘আমি পর্দা করা না করা আমার ইচ্ছা’। কারণ, কুরআন ঘোষণা করেছে—যদি কোনো দল বা সমাজ পাপাচারে নিজে সম্মতি জানায়, তবুও তোমরা আল্লাহর বিধান (হুদ্দুল্লাহ) অটলভাবে রক্ষা করবে।

এখান থেকেই স্পষ্ট হয় যে নারীর শালীনতা, পবিত্রতা ও পর্দা ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি আল্লাহরই বিধান, এটি তাঁরই অধিকার— অর্থাৎ হাক্কুল্লাহ।”

নারী: আল্লাহর অধিকারের রক্ষক আমানতদার
তিনি আরও বলেন, “নারীর মর্যাদা এমন এক পবিত্র আমানত যা আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তাঁর হাতে অর্পণ করেছেন। সুতরাং নারী, তার পরিবার এবং পুরো সমাজ— সবাই এই আল্লাহপ্রদত্ত আমানতের রক্ষক বা ‘আমিন’।

কুরআনের দৃষ্টিতে নারী হচ্ছেন ‘আমিনে হাক্কুল্লাহ’— অর্থাৎ আল্লাহর অধিকারের রক্ষক। আল্লাহ তাঁকে এই মর্যাদা দিয়ে বলেছেন, ‘এই আমার অধিকার, তুমি আমার আমানত হিসেবে তা সংরক্ষণ কর।’”

উৎস: গ্রন্থ: “زن در آینه جلال و جمال” (নারী—মর্যাদা ও সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি): আয়াতুল্লাহ আব্দুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি, পৃষ্ঠা: ৪৩৭

সারকথা: হিজাব কোনো সামাজিক রীতি নয়, এটি আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। নারী যখন তা রক্ষা করে, সে আসলে আল্লাহর আমানত সংরক্ষণ করছে। কিন্তু সমাজ যখন এই হিজাবকে উপহাস বা অবজ্ঞা করে, তখন তা শুধু ধর্মীয় নয়—একটি নৈতিক ও সভ্যতার সংকটেও পরিণত হয়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha