রবিবার ২ নভেম্বর ২০২৫ - ১৭:০৫
আল্লাহ তাওহিদের আদেশের পাশাপাশি পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারকেও গুরুত্ব দিয়েছেন

ইরানের ধর্মীয় নগরী কুম শহরে অবস্থিত হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.আ.)-এর পবিত্র মাজার প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক আধ্যাত্মিক আসরে বক্তা হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ হাদি হেদায়াত বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা তাওহিদের আদেশের পাশাপাশি পিতা-মাতার প্রতি ইহসান বা সদ্ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছেন, যা ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় পিতা-মাতার মর্যাদা ও অবস্থানের গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ হাদি হেদায়াত বলেন, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) কেবল “উম্মু আবিহা” (পিতার জননী) বা “উম্মুল আইম্মাহ” (ইমামগণের জননী) নন; বরং তিনি সমগ্র শিয়া সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক জননী। মুমিনদের আত্মিক ও নৈতিক গঠন তাঁর মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা লাভ করে।

হুজ্জাতুল ইসলাম হেদায়াত ইমাম সাদিক (আ.)-এর বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, পবিত্র কুরআনের আয়াত “الذین آمنوا و اتبعتهم ذریتهم بإیمان” সম্পর্কে ইমাম সাদিক (আ.) ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, হযরত ফাতিমা (সা.আ.) শিয়া শিশুদের আত্মিকভাবে লালন-পালন ও তালীম প্রদান করেন। এটি তাঁর অনন্য ও অতুলনীয় মর্যাদার প্রকাশক।

তিনি বলেন, হযরত যাহরা (সা.আ.)-এর উপাধি “যাহরা” রাখার কারণ হলো— আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিজের মহান নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন, যা সমগ্র ঈমানদার সমাজের জন্য পবিত্রতা, আলো ও হেদায়াতের উৎস।

বক্তা হাদিসে কিসার (চাদরের হাদিস) প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এই হাদিসটি শিয়াদের জন্য এক অমূল্য আধ্যাত্মিক সম্পদ এবং ধর্মীয় শিক্ষায় আদর্শ সন্তান গঠনের এক পূর্ণাঙ্গ নীতিনির্দেশিকা। এতে হযরত যাহরা (সা.আ.)-এর নবী করিম (সা.আ.) ও ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.)-এর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ও ভালোবাসার বন্ধন প্রকাশ পেয়েছে।

হুজ্জাতুল ইসলাম হেদায়াত বলেন, হাদিসে কিসার প্রথম শিক্ষা হলো পিতা-মাতার প্রতি সালাম ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। ইমাম হাসান (আ.) ঘরে প্রবেশ করে মাকে সম্বোধন করে বলেন, “السلام علیک یا اماه”— অর্থাৎ, “হে আমার মা, আপনার প্রতি সালাম।” উত্তরে হযরত যাহরা (সা.আ.) স্নেহ ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ভাষায় সন্তানের সালামের জবাব দেন। এটি পারিবারিক জীবনে পারস্পরিক সম্মান ও মমতার এক চমৎকার দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, কুরআন মাজিদে একাধিক স্থানে আল্লাহ তাওহিদের আদেশের পাশাপাশি পিতা-মাতার প্রতি ইহসান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি ইসলামে পিতা-মাতার সম্মান, দায়িত্ব ও স্থান কত উচ্চ তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

আহলে বাইতের (আ.) সীরাত থেকে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এমনকি নবী ঈসা (আ.)-এর ধর্মেও পিতা-মাতার প্রতি সম্মান অন্যতম মৌলিক শিক্ষা। কুরআনে তাঁর ভাষায় বলা হয়েছে: “وَبَرًّا بِوَالِدَتِي وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا شَقِيًّا”— অর্থাৎ, “আমি আমার মাতার প্রতি সদয়, আর তিনি আমাকে অহঙ্কারী বা দুর্ভাগা করেননি।”

হুজ্জাতুল ইসলাম হেদায়াত ইমাম সাদিক (আ.)-এর বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, পিতা-মাতার সেবা কেবল ইসলামেই নয়, বরং সব আসমানি ধর্মেই মুক্তি, কল্যাণ ও বরকতের কারণ। অন্যদিকে, তাঁদের অবাধ্যতা মানুষের অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে।

তিনি আরও বলেন, ইতিহাসে দেখা যায়, মহান আলেমদের জীবনে পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সেবার ফলেই তারা আত্মিক ও জ্ঞানগত উন্নতির শিখরে পৌঁছেছেন। যেমন— আয়াতুল্লাহ মেরআশি নাজাফি, আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি এবং অন্যান্য বিশিষ্ট আলেমরা তাঁদের জীবনের সাফল্যের পেছনে পিতা-মাতার সন্তুষ্টি ও দোয়ার প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।

হুজ্জাতুল ইসলাম হেদায়াত বলেন, পরিবারে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠার অন্যতম মূল উপাদান হলো পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা। হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) তাঁর সন্তানদের “চোখের আলো” ও “হৃদয়ের ফল” বলে সম্বোধন করেছেন, যা ইসলামী পরিবারব্যবস্থায় ভালোবাসা, সম্মান ও আধ্যাত্মিক সম্পর্কের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

তিনি বলেন, পিতা-মাতার মহানুভব আচরণ ও সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব সমাজে সুষম, নৈতিক ও ঈমানদার প্রজন্ম গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে। অন্যদিকে, পরিবারের মধ্যে অবমাননা বা অসম্মান মানুষের আত্মাকে দুর্বল করে দেয় এবং তাকে ঈমান ও নৈতিকতার পথ থেকে বিচ্যুত করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha