হাওজা নিউজ এজেন্সি: শিশুরা ক্ষুধার্ত হলে কান্না করে, ব্যথা বা অস্বস্তি পেলে কান্নার মাধ্যমেই তা জানায়। এভাবেই সে নিজের প্রয়োজন ও অনুভূতি চারপাশের মানুষের কাছে প্রকাশ করতে শেখে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর এই প্রকাশভঙ্গি বদলাতে হয়। যখন সে ধীরে ধীরে কথা বলতে শেখে, তখন কান্নার জায়গা নিতে হয় ভাষা, সংলাপ ও বোঝাপড়ার। শিশুকে শেখাতে হয়—সব কিছু কান্নার মাধ্যমে পাওয়া যায় না, বরং জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন কাউকে ‘না’ শুনতে হয় এবং মেনে নিতে হয়।
প্রত্যেক অভিভাবকের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয়— শুধু “না” বলতে জানা যথেষ্ট নয়, বরং সন্তানকে “না” শুনে সেটি গ্রহণ করার মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তোলাও সমান জরুরি। কারণ এই দক্ষতা শিশুর মানসিক ভারসাম্য, আবেগীয় পরিপক্বতা ও আচরণগত নিয়ন্ত্রণ গঠনে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।
প্রথমদিকে অভিভাবকরা হয়তো ভাবেন, “না” বলা সন্তানের প্রতি কঠোরতা বা ভালোবাসার অভাবের নিদর্শন। কিন্তু বাস্তবে ঠিক উল্টোটা সত্য— সীমারেখা নির্ধারণই ভালোবাসার প্রকৃত প্রকাশ। কারণ, একটি সীমাহীন স্বাধীনতা শিশুর শৃঙ্খলা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবতার ধারণাকে দুর্বল করে ফেলে। অপরদিকে, স্নেহমিশ্রিত দৃঢ় ‘না’ তাকে শেখায় দায়িত্ববোধ, ধৈর্য এবং আত্মসম্মান।
শিশুর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার চাহিদা ও জেদও বৃদ্ধি পায়। সে কখনো দ্বিতীয়বার আইসক্রিম খেতে চায়, আবার কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা কার্টুন দেখতে অনুরোধ করে। এই সময়েই শুরু হয় প্রকৃত তারবিয়াত (প্রতিপাল বা চরিত্রগঠন।
অভিভাবকদের উচিত এই মুহূর্তগুলোকে শাস্তি বা রাগের সময় হিসেবে না দেখে, বরং এগুলোকে শিক্ষার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা। ধৈর্যের সঙ্গে ব্যাখ্যা করতে হবে কেন “না” বলা হচ্ছে—যেমন, “তুমি এখন আরও আইসক্রিম খেলে অসুস্থ হতে পারো”, অথবা “অতিরিক্ত কার্টুন দেখা চোখের ক্ষতি করবে।” এভাবে যুক্তি ও ভালোবাসার মাধ্যমে বোঝানো হলে শিশু “না” শুনেও নিরাপত্তা ও গ্রহণযোগ্যতা অনুভব করবে।
এখানে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি— অতি কড়া শাসন যেমন শিশুর আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়, তেমনি অতিরিক্ত ছাড় তার আত্মনিয়ন্ত্রণ নষ্ট করে। তাই, অভিভাবককে একদিকে দৃঢ় থাকতে হবে, অন্যদিকে সন্তানের অনুভূতির প্রতিও সংবেদনশীল থাকতে হবে।
যখন একটি শিশু “না” শুনে কাঁদে বা রাগ করে, তখন সেটি তার মানসিক বিকাশের স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু ধীরে ধীরে, পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে সে শিখে নেয় যে জীবনে সবকিছু নিজের মতো করে চলে না। এই উপলব্ধিই তাকে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে শেখায় এবং ভবিষ্যতে হতাশা বা ব্যর্থতা সামলানোর শক্তি দেয়।
“না” শেখানো মানে নিষেধ করা নয়, বরং সীমা শেখানো— কোনটা সঠিক, কোনটা সময়োচিত নয়, কোনটা পরে পাওয়া সম্ভব। এটি সন্তানের অন্তর্নিহিত নৈতিক বোধ ও আত্মসংযম তৈরির পথ।
“শৈশব কান্না দিয়ে শুরু হয়, কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা শুরু হয় কথোপকথন দিয়ে।” অনেক সময় একটি ‘না’ বলা মানে একটি ‘হ্যাঁ’-এর সূচনা— হ্যাঁ, পরিপক্বতার দিকে; হ্যাঁ, আত্মনিয়ন্ত্রণের দিকে; হ্যাঁ, সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার দিকে।
একজন জ্ঞানী অভিভাবক জানেন, প্রতিটি ‘না’-এর পেছনে রয়েছে একটিই লক্ষ্য— সন্তান যেন ভালো মানুষ হয়ে ওঠে।
উৎস: ইসলামি পরামর্শকেন্দ্র সামাহ
আপনার কমেন্ট