হাওজা নিউজ এজেন্সি: হাদিসের বাণী «رَحِمَ اللهُ مَنْ أَهْدَى إِلَيَّ عُيُوبِي» আমাদের শেখায় যে আন্তরিকতার সঙ্গে কারও ত্রুটি জানানো এক মহান উপকার। সদিচ্ছা নিয়ে অন্যের ভুল বলা— তা পরিবারেই হোক বা বৃহত্তর সমাজে—একটি নৈতিক দায়িত্ব এবং প্রকৃত বিনয়ের প্রকাশ।
জীবনে অনেক সময় সর্বোত্তম উপহার না ফুল, না স্বর্ণ; বরং এমন একটি কথন, যা মানুষকে তার ভুল সম্পর্কে সচেতন করে। যে আয়না আমাদের ত্রুটি দেখায়, তার মূল্য হাজার প্রশংসার চেয়ে বেশি।
যেমন বর্ণনায় এসেছে:
رَحِمَ اللهُ مَنْ أَهْدَى إِلَيَّ عُيُوبِي
আল্লাহ রহমত করুন সেই ব্যক্তিকে, যে আমার ত্রুটিকে আমার কাছে উপহার দেয়। অর্থাৎ, কেউ যদি সত্যিই আমাদের উপকার করতে ইচ্ছুক হয়, সে একান্তে বলবে: “হুজুর! আমি আপনার জীবনে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি; একটি ত্রুটি আছে, যা আপনাকে জানাতে চাই।”
আপনি যদি ইমাম-এ জমায়াতকে উপহার দিতে চান, তা শুধু সম্মান প্রদর্শন নয়; বরং বাস্তব উপকার হতে পারে একটি গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে। একান্তে বলতে পারেন: “হুজুর! আমরা আপনার বক্তব্যগুলো নিয়মিত শুনেছি, এবং আজ আমরা একটি ‘ফুল’ উপহার দিতে চাই—আপনার এই বক্তব্যে এই অংশটি দুর্বল লেগেছে; অথবা আলোচনাটি কখনো খুব কঠিন হয়ে যায়, কখনো আবার খুব সাধারণ মনে হয়।”— এই ধরণের আন্তরিক প্রতিক্রিয়াই প্রকৃত উপহার।
শুধু “صلّ علی محمّد…” স্লোগান দেওয়া উপহার নয়। প্রকৃত উপহার হলো কাউকে তার দুর্বলতা চিহ্নিত করে উন্নতির সুযোগ করে দেওয়া। কিয়ামতের দিনে মানুষ কাকে কৃতজ্ঞতা জানাবে? যে তাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছে, নাকি যে তার ত্রুটি সংশোধনে সহায়তা করেছে?
পরিবারেও একই নীতি প্রযোজ্য। সন্তানদের বলুন: “তোমরা যদি আমার ভুল আমাকে জানাও, আমি তোমাদের জন্য দোয়া করব।”— এভাবেই প্রকৃত বিনয় শেখানো সম্ভব; অহংকার থেকে দূরে থাকা যায়; এবং নৈতিক পরিপক্বতা অর্জন হয়।
এর বিপরীতে, যদি কেউ ঘরে বলে— “আমি বাবা; আমি বড়; আমার কথাই শেষ; আমার বিরুদ্ধে কথা বলা নিষিদ্ধ”— তবে তা বিনয় নয়, বরং অহংকার; যা চরিত্র গঠন, নৈতিক শিক্ষণ ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পরিপন্থী।
সূত্র: আয়াতুল্লাহ হায়েরী শিরাজী, রাহে রুশদ (আত্মোন্নতি ও আত্মশুদ্ধির পথ), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৩৪
আপনার কমেন্ট