হাওজা নিউজ এজেন্সি: তেহরানে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ৪র্থ আন্তর্জাতিক সামরিক চিকিৎসা সম্মেলন উদ্বোধনের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিমানবাহিনীসহ সেনাবাহিনীর সব সক্ষমতা উন্নয়ন ইরাক–ইরান যুদ্ধের পর থেকেই অব্যাহত অগ্রাধিকার।
তিনি বলেন, “হুমকি সবসময় পরিবর্তিত হয়, তাই প্রস্তুত থাকা বাধ্যতামূলক। আমরা যদি শক্তিশালী ও প্রতিরোধক্ষম হই, কেউই আমাদের জাতীয় স্বার্থ লঙ্ঘনের সাহস পাবে না।”
সাইয়ারি জানান, ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী সব সামরিক মাত্রায় শক্তিশালী হওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের এই পথেই এগোতে হবে এবং ভবিষ্যতের হুমকির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। স্থলবাহিনী, বিমানবাহিনী, আকাশ প্রতিরক্ষা, নৌবাহিনী, সাইবার ক্ষেত্র এবং আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের সব মাত্রায় সক্ষমতা বৃদ্ধি সবসময়ই আমাদের এজেন্ডায়।”
আরোপিত ১২ দিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা
ইসরাইল আরোপিত সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধে সেনাবাহিনী যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তা এখন নীতিনির্ধারণে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তার ভাষায়, “কোভিড–১৯ সংকটে যেমন আমরা সংগৃহীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলাম, সাম্প্রতিক যুদ্ধে যে অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া গেছে সেগুলোও সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। যেখানে দুর্বলতা ছিল সেগুলো সমাধান করা হয়েছে।”
গত ১৩ জুন, ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনা চলার সময় ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ও উসকানিমূলক হামলা চালায়। এর পরপরই ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হয়, যাতে অন্তত ১,০৬৪ জন নিহত হন—এর মধ্যে সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক রয়েছেন।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
প্রতিশোধমূলক অভিযানে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী দখলকৃত ভূখণ্ডের কৌশলগত স্থাপনাগুলোসহ কাতারের আল-উদেইদ ঘাঁটি—যা পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি—লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।
২৪ জুন, ইরান সফল পাল্টা-অভিযানের মাধ্যমে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র—দু’পক্ষকেই—হামলা থামাতে বাধ্য করে।
ইরানের সামরিক প্রস্তুতির বর্তমান অবস্থান
সাইয়ারি জানান, ইরানের বর্তমান সামরিক প্রস্তুতির মাত্রা “অত্যন্ত উচ্চ”—কারণ সশস্ত্র বাহিনী বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের পরীক্ষা করেছে এবং নিয়মিতভাবে সক্ষমতা মূল্যায়ন করছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধক্ষমতা শক্তিশালী করা ইরানের স্থায়ী কৌশলগত নির্দেশ।”
এসসিও সামরিক চিকিৎসা সম্মেলন ও আঞ্চলিক সহযোগিতা
এসসিওর সামরিক চিকিৎসা সম্মেলনে আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মেডিকেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, বেলারুস এবং কাজাখস্তানের প্রতিনিধিরা সামরিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সহযোগিতা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
সাইয়ারি জানান, এ অনুষ্ঠান সদস্য দেশগুলোর সামরিক চিকিৎসাবিষয়ক অভিজ্ঞতা ও প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা বিনিময়কে গভীরতর করেছে।
তিনি আরও বলেন, এসসিও–তে ইরানের পূর্ণ সদস্যপদ দেশটির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। এ ধরনের আয়োজন সহযোগিতা ও বিনিময়ের ক্ষেত্র প্রসারিত করে।
তিনি উল্লেখ করেন, ইরান ভারত মহাসাগরীয় নৌ-সিম্পোজিয়াম (IONS) সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্মেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এবং উত্তর ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
আপনার কমেন্ট