বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর ২০২৫ - ১৯:০৩
আধুনিক সমাজে হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা

হওজা নিউজ এজেন্সিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা মোশাব্বির খান (পশ্চিম বঙ্গ, ভারত)

বিশেষ সাক্ষাৎকার:

হাওজা নিউজ এজেন্সি:
আসসালামু আলাইকুম, মাওলানা সাহেব। আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। আজ আমরা আলোচনা করব “আধুনিক সমাজে হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা” নিয়ে। শুরুতেই জানতে চাই, বর্তমান সমাজে কেন হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষা পুনরায় আলোচনার দাবি রাখে?

মাওলানা মোশাব্বির খান: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন এমন এক আলোকবর্তিকা, যা সময় ও সমাজের সীমা অতিক্রম করেছে। আধুনিক সমাজে যখন নারীর মর্যাদা, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার সংকট দেখা দিয়েছে, তখন তাঁর শিক্ষা আমাদের জন্য এক অবিনাশী দিশারী। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে ধর্ম, দায়িত্ব, ও মানবিকতার সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গড়া যায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:
অনেকেই মনে করেন, হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন কেবল ধর্মীয় পরিমণ্ডলে সীমাবদ্ধ। আপনি কি মনে করেন, তাঁর শিক্ষায় সামাজিক বা রাজনৈতিক বার্তাও রয়েছে?

মাওলানা মোশাব্বির খান: অবশ্যই রয়েছে। তিনি শুধু একজন ধর্মপরায়ণ নারীই নন, বরং সমাজ সচেতন ও ন্যায়বোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর খুতবা-ই-ফাদক হচ্ছে ইসলামী সমাজে নারীর সক্রিয় ভূমিকার এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। তিনি দেখিয়েছেন, ন্যায়ের পক্ষে আওয়াজ তোলা কেবল পুরুষের দায়িত্ব নয়— বরং প্রতিটি সচেতন মানুষের দায়িত্ব। আজকের সমাজে যখন মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব, তখন ফাতিমা (সা.)-এর সাহস ও দৃঢ়তা আমাদের অনুপ্রেরণা দিতে পারে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:
আধুনিক নারীর জন্য হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শিক্ষায় কী বার্তা নিহিত আছে বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা মোশাব্বির খান: হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শিক্ষা আধুনিক নারীর জন্য এক পরিপূর্ণ পথনির্দেশ। তিনি প্রমাণ করেছেন যে নারীর মর্যাদা জ্ঞান, চরিত্র ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে স্থাপিত হয়। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ কন্যা, স্ত্রী, মা এবং সমাজকর্মী। আজকের নারীরা যদি তাঁর আত্মসম্মান, আত্মনিবেদন ও পরিবার-নিষ্ঠার শিক্ষাকে ধারণ করেন, তবে সমাজের নৈতিক পুনর্গঠন সম্ভব হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:
পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তাঁর আদর্শ থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি?

মাওলানা মোশাব্বির খান: তিনি পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, কিভাবে পরিবার সমাজের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তাঁর জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ত্যাগ ও সহানুভূতির অনন্য উদাহরণ রয়েছে। আজ যখন পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে, তখন তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা পরিবারে শান্তি ও ঐক্য ফিরিয়ে আনতে পারি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:
শেষ প্রশ্ন — আপনি যদি সংক্ষেপে বলেন, আধুনিক সমাজে হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শিক্ষার সারমর্ম কী?

মাওলানা মোশাব্বির খান: সংক্ষেপে বললে, তাঁর শিক্ষা হলো— আধ্যাত্মিকতা, ন্যায়বিচার ও মানবতার এক সমন্বিত দৃষ্টি। হজরত ফাতিমা (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, আত্মশুদ্ধি ছাড়া সমাজের পরিবর্তন সম্ভব নয়। যদি আমরা তাঁর চরিত্রের আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করি, তাহলে নৈতিক ও মানবিক সংকটে নিমজ্জিত আধুনিক সমাজে নতুন প্রাণসঞ্চার ঘটবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:
ধন্যবাদ মাওলানা সাহেব, আপনার মূল্যবান সময় ও ভাবনার জন্য।
মাওলানা মোশাব্বির খান: আপনাকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শিক্ষার অনুসারী হওয়ার তৌফিক দিন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha