সোমবার ৩ নভেম্বর ২০২৫ - ১৫:২৬
হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শাহাদাত বার্ষিকীতে আত্মসমালোচনার আহ্বান

বিবৃতি জারিকরেছেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা মোশাব্বির খান (ইরাকে অধ্যায়নরত)

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন কিছু মহান ব্যক্তিত্ব আছেন, যাঁদের জীবন, কর্ম ও ত্যাগ যুগে যুগে মানবতার জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যেই অন্যতম হলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় কন্যা, নারীজাতির সর্বোচ্চ মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব—হজরত ফাতিমা যাহরা (সা.)। তাঁর পবিত্র জীবন ইসলামী আদর্শ, ত্যাগ, ধৈর্য ও ন্যায়পরায়ণতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আজ, তাঁর শাহাদাতের এই স্মরণীয় বার্ষিকীতে আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও শোকের সঙ্গে স্মরণ করছি সেই মহীয়সী নারীর অসীম ত্যাগ ও আদর্শকে। একই সঙ্গে, এই দিনটি আমাদের জন্য কেবল শোকের নয় -বরং আত্মসমালোচনার আহ্বান বহন করে।

হজরত ফাতিমা (সা.)—ন্যায়, সত্য ও ত্যাগের প্রতীক

হজরত ফাতিমা (সা.) ছিলেন নবী করিম (সা.)-এর দাওয়াত ও দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের এক নীরব সাক্ষী। মক্কার নিপীড়ন থেকে শুরু করে মদীনায় ইসলামি সমাজ নির্মাণের প্রতিটি ধাপে তিনি ছিলেন ধৈর্য, সহমর্মিতা ও ঈমানের দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি। নবী (সা.) তাঁকে বলেছিলেন,

“ফাতিমা আমার প্রাণের অংশ।”
এই কথাই প্রমাণ করে তাঁর আধ্যাত্মিক মর্যাদা ও নবুয়তের সঙ্গে গভীর সংযোগ।

নবীজির ইন্তেকালের পর যখন মুসলিম সমাজে মতবিরোধ, বিভাজন ও ক্ষমতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তখন ফাতিমা (সা.) সাহসিকতার সঙ্গে সত্যের পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন। তিনি ন্যায়বিচারের দাবি করেছিলেন, ইসলামী মূল্যবোধের সংরক্ষণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর শাহাদাত কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়—এটি ছিল সত্য ও ন্যায়ের পথে এক মহা আত্মত্যাগ।

আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীয়তা

হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শাহাদাত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—প্রতিটি মুসলমানের জন্য আত্মসমালোচনা অপরিহার্য।
আজ আমাদের সমাজে ন্যায়বিচারের অভাব, দুর্নীতি, অনৈতিকতা, অন্যায়ের প্রতি নীরবতা ও ঈমানের দুর্বলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ ফাতিমা (সা.)-এর জীবন আমাদের শিখিয়েছিল-সত্যের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলো, এবং নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করো।

এই দিনে আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজেদের কাছে প্রশ্ন করা

আমরা কি ফাতিমা (সা.)-এর মতো সত্যের পথে অবিচল থাকতে পারছি?

আমরা কি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছি, নাকি স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ করছি?

আমরা কি ইসলামী মূল্যবোধ ও মানবতার আদর্শ আমাদের জীবনযাত্রায় বাস্তবায়ন করছি?

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফাতিমা (সা.)-এর শিক্ষা

আজকের যুগে, যেখানে সমাজে বিভেদ, হিংসা, ভোগবিলাস ও অন্যায় প্রবল—সেখানে ফাতিমা (সা.)-এর জীবন এক অনন্ত আলোকবর্তিকা। তাঁর আদর্শ আমাদের শেখায়-

সহজ জীবন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা;

ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা, যদিও সে পথ কঠিন হয়;

অন্যের প্রতি দয়া, সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা;

পরিবার ও সমাজে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার পরিবেশ গড়ে তোলা।

আমাদের অঙ্গীকার

এই শাহাদাত বার্ষিকীতে আমরা প্রতিজ্ঞা করি—
আমরা ফাতিমা (সা.)-এর ত্যাগ ও আদর্শকে স্মরণ রেখে অন্যায়, অবিচার, বিভেদ ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেব। আমরা সমাজে ন্যায়, ভালোবাসা ও ইসলামি চেতনার পুনর্জাগরণ ঘটাতে কাজ করব।

হজরত ফাতিমা (সা.)-এর শাহাদাত আমাদের শেখায় যে, সত্যের পথে হাঁটা কখনো সহজ নয়, কিন্তু সেটিই একমাত্র পথ যা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানবতার কল্যাণ বয়ে আনে।

শেষে তিনি বলেন, হজরত ফাতিমা (সা.) ছিলেন মানবতার মুক্তির এক পবিত্র আলোকরশ্মি। তাঁর শাহাদাত আমাদের শোকের সঙ্গে সঙ্গে আহ্বান জানায় আত্মজিজ্ঞাসার, আত্মশুদ্ধির এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার।
আজকের এই দিনে, আসুন আমরা নিজেদের ভেতর তাকাই—আমাদের চিন্তা, আচরণ ও সমাজে আমরা কতটা তাঁর আদর্শ অনুসরণ করছি।

তাঁর পবিত্র জীবনের শিক্ষা হোক আমাদের নৈতিক জাগরণের প্রেরণা, এবং তাঁর শাহাদাত হোক আমাদের আত্মসমালোচনার আলোকবর্তিকা।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha