শনিবার ১৫ নভেম্বর ২০২৫ - ১১:৪৬
চরমপন্থা মোকাবিলা ও যুবসমাজের সঠিক চিন্তাগত দিকনির্দেশনা

চরমপন্থা মোকাবিলা ও যুবসমাজের সঠিক চিন্তাগত দিকনির্দেশনা

আজকের মুসলিম বিশ্বের প্রধান অগ্রাধিকার

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আবদুল মাজিদ হাকিম ইলাহি, ভারতে জামায়াতে ইসলামি হিন্দের আমীরের সঙ্গে সাক্ষাতে চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই ও যুবসমাজের চিন্তাগত দিকনির্দেশনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং মধ্যপন্থী ইসলামকে ন্যায়বিচার, সংলাপ ও বৈশ্বিক শান্তির উজ্জ্বল পথ হিসেবে উল্লেখ করেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আবদুল মাজিদ হাকিম ইলাহি, ভারতের জন্য নবী প্রতিনিধির দায়িত্বপ্রাপ্ত আলেম, একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দিল্লিতে জামায়াতে ইসলামি হিন্দের আমীর ড. সাইয়্যেদ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি’র সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত বৈঠক করেন। জামায়াতে ইসলামি হিন্দের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ, যুবসমাজের চিন্তাগত সমস্যা, মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থা এবং যৌথ শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।

এই সাক্ষাৎ ভারতে সর্বচ্চো নেতার প্রতিনিধির কার্যালয় ও জামায়াতে ইসলামির মধ্যকার দীর্ঘদিনের ফিকহি ও সামাজিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামির আমীর উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, দুই প্রতিষ্ঠানের বহু দশকের যোগসূত্র আজও অটুট রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে জামায়াতে ইসলামি হিন্দ মধ্যপন্থী ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে তাদের অন্যতম মৌলিক নীতি হিসেবে বিবেচনা করে।

যুবসমাজের চিন্তাগত চ্যালেঞ্জ ও ভার্চুয়াল পরিবেশের প্রভাব

হাকিম ইলাহি বলেন, আজ প্রায় ৭০ শতাংশ যুবক সরাসরি ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তাদের চিন্তাসামগ্রী গ্রহণ করে। এমন পরিস্থিতিতে ধর্মীয় কেন্দ্র, আলেমসমাজ ও জামায়াতে ইসলামির মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি পশ্চিমা সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব, বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি, পরিবারব্যবস্থার ভাঙন এবং ধর্মীয় সচেতনতার পতনের মতো হুমকির দিকেও ইঙ্গিত করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইন মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে তারা যুবসমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।

যৌথ শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচির ওপর গুরুত্বারোপ

বৈঠকে উভয় পক্ষ যৌথ শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি নকশা ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের জন্য স্থায়ী পরিবেশ সৃষ্টি এবং মধ্যপন্থী ইসলামের প্রচারকে দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ইসলামের তিনটি প্রধান প্রবণতা

হাকিম ইলাহি ইসলামের তিনটি পৃথক প্রবণতার ব্যাখ্যা দেন:

১. তাকফিরি ইসলাম:
সহিংসতা, চরমপন্থা ও সাম্প্রদায়িকতার ওপর ভিত্তি করে গঠিত এক দৃষ্টিভঙ্গি। এর উদাহরণ—দাঈশ (আইএসআইএস), আল-কায়েদা, বোকো হারাম ইত্যাদি।


২. লিবারেল ইসলাম:
এমন একটি ধারা, যা ইসলামের শিক্ষাকে পাশ্চাত্য ভাবধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা করে। বাস্তবে এটি ফিলিস্তিন ও গাজা-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের অবস্থানকে দুর্বল করে।


৩. মধ্যপন্থী ইসলাম:
ন্যায়বিচার, সংলাপ, শান্তি এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ভিত্তিতে গঠিত দৃষ্টিভঙ্গি—যা ইরান, আলেমসমাজ এবং জামায়াতে ইসলামি হিন্দের মধ্যে সমাদৃত।

তিনি ইরান–ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামি হিন্দের সমর্থনের জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং এটিকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি তাদের ইতিবাচক ভূমিকা হিসেবে উল্লেখ করেন।

যৌথ বৈজ্ঞানিক ও প্রশিক্ষণমূলক সহযোগিতায় ঐকমত্য

বৈঠকের শেষে উভয় প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছায়। এর মধ্যে রয়েছে:

যৌথ বৈজ্ঞানিক ও গবেষণা প্রকল্পের সূচনা

বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সেমিনার ও সম্মেলন আয়োজন

যুবসমাজের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালা

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যৌথ শিক্ষামূলক কনটেন্ট তৈরি

জামায়াতে ইসলামি হিন্দের আমীর ড. সাদাতুল্লাহ হুসাইনি এই সহযোগিতাকে সময়োপযোগী এবং ইসলামী সমাজের বর্তমান চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামি হিন্দ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার সঙ্গে এই সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে।

এই বৈঠককে উভয় পক্ষই নতুন এক যুগের সূচনা—চিন্তাগত ঐক্য, ধর্মীয় সহযোগিতা এবং যৌথ শিক্ষামূলক ও গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নের ভিত্তি—হিসেবে মূল্যায়ন করেছে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha