মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ১৪:৫৫
হযরত আবুল ফযল আব্বাস (আ.)’র প্রতিকী ছবি

হযরত আবুল ফযল আব্বাস ইবনে আলী (আ.) ইসলামের ইতিহাসে এক মহিমান্বিত চরিত্র। তিনি ছিলেন হযরত আলী (আ.) ও উম্মুল বানীন (রা.)-এর সন্তান এবং হযরত হুসাইন (আ.)-এর ভাই। কারবালার বিপ্লবী ইতিহাসে তিনি অসামান্য বীরত্ব, আনুগত্য ও ত্যাগের স্বাক্ষর রেখেছেন৷

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হযরত আবুল ফযল আব্বাস (আ.)’র অসংখ্য বৈশিষ্ট ও গুণাবলীর মধ্যে এই প্রবন্ধে তাঁর চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন জনাব নাজমুল হক! নীচে তা তুলে ধরছি:

১. অসীম বীরত্ব ও সাহস
আব্বাস (আ.) ছিলেন এক অসাধারণ বীর, যাঁর সাহস কারবালার প্রান্তরে আলোকিত হয়ে আছে। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পাশে থেকে ইয়াজিদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ হন। কারবালায় তাঁর বীরত্ব সম্পর্কে বলা হয়:

قال الإمام الصادق (عليه السلام): "كان عمّي العبّاس بن عليّ نافذ البصيرة، صلب الإيمان، جاهد مع أبي عبد الله وأبلى بلاءً حسنًا ومضى شهيدًا

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন,"আমার চাচা আব্বাস ছিলেন অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন, দৃঢ় ঈমানদার, তিনি আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম হুসাইন)-এর সঙ্গে জিহাদ করেছেন এবং উত্তমভাবে সংগ্রাম করে শহীদ হয়েছেন।" (আল-আমালী, শেখ তুসী, হাদীস ৭৩)

২. ইমামের প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য

আব্বাস (আ.) কেবলমাত্র ভাই হিসেবে নয়, বরং ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রকৃত অনুসারী ছিলেন। তিনি কখনো ইমামের আদেশ লঙ্ঘন করেননি। বিশেষত, যখন তাঁকে ইমাম হুসাইন (আ.) শত্রুর বাহিনী থেকে পানি আনার নির্দেশ দেন, তখন তিনি বিপদ জেনেও সেই আদেশ পালন করেন এবং শহীদ হন।

قال الإمام الحسين (عليه السلام): "يا أبا الفضل، أنت أخي وحامل لوائي وساقي عطاشى كربلاء"

ইমাম হুসাইন (আ.) বলেছেন, "হে আবুল ফযল! তুমি আমার ভাই, আমার পতাকা বাহক এবং কারবালার পিপাসার্তদের জন্য পানি সরবরাহকারী।" (মাকতালুল -হুসাইন, আবু মিখনাফ)

৩. অসামান্য ধৈর্য ও আত্মত্যাগ

কারবালায় আব্বাস (আ.) এক অভূতপূর্ব ধৈর্যের পরিচয় দেন। তিনি যখন ফোরাত নদী থেকে পানি আনতে গেলেন, তখন প্রচণ্ড তৃষ্ণা সত্ত্বেও নিজে পানি পান করেননি, বরং ইমাম হুসাইন (আ.) ও আহলে বাইতের শিশুদের জন্য তা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

قال رسول الله (صلى الله عليه وسلم): "أفضل الناس من جاد بنفسه في سبيل الله"


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই, যে আল্লাহর পথে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে।" (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস ২৩৪৭৭)

৪. কারবালার পতাকা বাহক ও প্রতীকী নেতৃত্ব

কারবালার যুদ্ধে আব্বাস (আ.) ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পতাকা বহন করতেন এবং তাঁর নেতৃত্ব ছিল অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর শত্রুর প্রতি দৃঢ়তা এবং ইমামের প্রতি আনুগত্যের কারণে তিনি "বাবুল হাওয়ায়েজ" (প্রার্থনার দরজা) উপাধিতে ভূষিত হন।

قال الإمام زين العابدين (عليه السلام): "إنّ للعبّاس عند الله منزلة يغبطه بها جميع الشهداء"

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেছেন,"আব্বাসের জন্য আল্লাহর কাছে এমন মর্যাদা রয়েছে, যা দেখে সমস্ত শহীদগণ ঈর্ষা করবেন।" (বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ১৯৫)
পরিশেষে,হযরত আবুল ফযল আব্বাস (আ.) ছিলেন এক মহৎ চরিত্র, যাঁর জীবন ইসলামী সাহস, আনুগত্য, আত্মত্যাগ ও ন্যায়ের প্রতীক। তাঁর জীবন ও কর্ম মুসলমানদের জন্য এক মহান আদর্শ। কারবালার ইতিহাসে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা যুগ যুগ ধরে মানুষকে ন্যায়পরায়ণতা, সাহস ও ঈমানের শক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে আসছে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha