হাওজা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ মাহমুদ রাজবী ইরানের কোম শহরের মাদ্রাসায়ে মাসুমিয়ার মসজিদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক দারসে আখলাক তথা নৈতিক শিক্ষা ক্লাসে মানবিক পরিপূর্ণতার জন্য দুটি প্রয়োজনীয় জ্ঞানের ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বিখ্যাত হাদীস "মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু" (যে নিজেকে চেনে, সে তার প্রভুকে চেনে) এর উল্লেখ করে বলেছেন, আমাদের দুটি জ্ঞান প্রয়োজন, যা পরস্পর সম্পূরক; আত্ম-জ্ঞান এবং আল্লাহর জ্ঞান। এই দুটি জ্ঞান মানুষের বিকাশের মূল ভিত্তি গঠন করে।
আল্লাহর মারেফাত সংশ্লিষ্ট জ্ঞান বৃদ্ধির উপায়
হাওজায়ে ইলমিয়ার সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য আল্লাহর মারেফাত সংশ্লিষ্ট জ্ঞান বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা। যদি আমরা আমাদের জীবনকে এমনভাবে সাজাই যে সর্বদা আল্লাহর স্মরণে থাকি, তাহলে এটি আমাদের আল্লাহর জ্ঞান বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, আল্লাহর আয়াত ও সৃষ্টিতে তাঁর নিদর্শন যেমন আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা আমাদের আল্লাহর জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারে।
তিনি আরও যোগ করেছেন, আল্লাহর গুণাবলী যেমন ক্ষমতা, জ্ঞান, করুণা ও প্রভুত্ব সম্পর্কে চিন্তা করা জ্ঞান বৃদ্ধির আরেকটি উপায়। এই চিন্তা কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানই নয়, বরং মানুষের স্বাভাবিক ও উপস্থিত জ্ঞানকেও শক্তিশালী করে।
মারেফাত অর্জনে আল্লাহর নিয়ামত ও তাঁর প্রিয়জনদের অবদান
আয়াতুল্লাহ রজভী আল্লাহর নিয়ামতের ভূমিকা সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক নিয়ামত সম্পর্কে চিন্তা করা এবং সেগুলো স্মরণ করা মানুষকে আরও বেশি করে আল্লাহর মহত্ত্ব ও করুণা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আল্লাহর প্রিয়জন ও ধর্মীয় পণ্ডিতদের সঙ্গে সান্নিধ্য মানুষের আল্লাহর জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারে। ইমামগণ (আ.) তাদের জীবদ্দশায় এবং ইন্তেকালের পরেও সর্বদা মানুষের আল্লাহর জ্ঞান বৃদ্ধি করে আসছেন।
জ্ঞান ও ঈমান: আমলে পরিণত করার পূর্বশর্ত
আয়াতুল্লাহ রজভী বক্তব্যের আরেক অংশে জ্ঞান, ঈমান ও কাজের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, শুধু জ্ঞানই কাজের জন্য যথেষ্ট নয়, বরং এই জ্ঞানকে ঈমানের রূপান্তরিত করতে হবে। ঈমানই মানুষকে কাজে প্রভাবিত করে। যদি জ্ঞান মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে এবং ঈমান হিসাবে পরিণত হয়, তাহলেই মানুষ তদনুসারে কাজ করবে।
কুরআনের আয়াতগুলোর প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, পবিত্র কুরআন বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করেছে যে কিছু ব্যক্তি জ্ঞান ও নিশ্চিত ইয়াকিন থাকা সত্ত্বেও তার বিপরীতে কাজ করে। এটি প্রমাণ করে যে শুধু জ্ঞানই যথেষ্ট নয়, বরং মানুষের হৃদয়কে এই জ্ঞানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে এবং ঈমান অর্জন করতে হবে।
জ্ঞানকে ঈমানে রূপান্তরের পথো বাধাসমূহ
নৈতিকতা বিষয়ক শিক্ষক জ্ঞানকে ঈমানের রূপান্তরের বাধাসমূহ সম্পর্কে বলেছেন, দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ এবং বস্তুগত বিষয়ের প্রতি প্রেম জ্ঞানকে ঈমানের রূপান্তরের মূল বাধা। যদি মানুষের চিন্তা ও উদ্বেগ দুনিয়াবী হয়ে যায়, তাহলে সবচেয়ে দৃঢ় জ্ঞানও তাকে আমলে প্রভাবিত ও বাধ্য করতে পারে না। এছাড়াও দীর্ঘায়িত আকাঙ্ক্ষা এবং পার্থিব লোভ মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং জ্ঞানকে ঈমানে রূপান্তরিত হতে বাধা দেয়।
ইমাম খোমেনী (রহ.) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট শেষে জোর দিয়ে বলেন, জ্ঞানকে ঈমানের রূপান্তরিত করতে আমাদের হৃদয়ের যত্ন নিতে হবে এবং হৃদয়কে দুনিয়ার বন্ধন থেকে মুক্ত করতে হবে। শুধুমাত্র এই অবস্থায় আমাদের জ্ঞান আমলে পরিণত হবে এবং আল্লাহর মারেফাতের ভিত্তিতে আমাদের জীবন গঠিত হবে।
আপনার কমেন্ট