হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেওয়ায়েত উঠে এসেছে সাহাবি সোলাইম ইবনে কাইস হিলালী (রহ.)-এর বর্ণনায়। তিনি জানান, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের শেষ মুহূর্তে তিনি নবী করিম (সা.)-এর সান্নিধ্যে ছিলেন। তখন রাসুল (সা.) তাঁর নিকটাত্মীয় ও উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত আমিরুল মুমিনিন ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর দিকে মুখ ফিরিয়ে একটি গভীর বার্তা প্রদান করেন, যা ইসলামের রাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর তাৎপর্য বহন করে।
বিদ্রোহ ও অত্যাচারের পূর্বাভাস
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: "হে আমার ভাই, নিঃসন্দেহে কুরাইশ তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। তারা একসাথে অন্যায়ের ওপর ঐক্যবদ্ধ হবে, তোমাকে কষ্ট দেবে ও অত্যাচার করবে।"
এই বক্তব্যে তিনি সরাসরি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে একটি সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক বিদ্রোহ ঘটবে, যা বাস্তবে খোলাফায়ে রাশেদিন পরবর্তী সময়েই দেখা গেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও খিলাফতের প্রশ্নে তাঁকে একপাশে ঠেলে দেওয়া হয়, এমনকি তাঁর ন্যায্য অধিকারও উপেক্ষিত হয়।
জিহাদ না ধৈর্য?
রাসুল (সা.) ইমাম আলী (আ.)-কে দুটি পথের নির্দেশনা দেন: "যদি তুমি সহযোদ্ধা পাও, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো। আর যদি সহায়তা না পাও, তাহলে ধৈর্য ধরো ও নিজেকে বাঁচাও—তোমার রক্ত যেন বিনা কারণে না ঝরে।"
এই নির্দেশনায় নবী (সা.) স্পষ্ট করে দেন যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই সর্বোত্তম, তবে পরিস্থিতির বিচারে কখনও ধৈর্য ও সংযমই শ্রেষ্ঠ কৌশল। এটি ইমাম আলী (আ.)-এর রাজনৈতিক অবস্থান ও সিদ্ধান্তের একটি নৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।
শাহাদতের ইঙ্গিত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “জেনে রেখো, তোমার পেছনে শাহাদত অপেক্ষা করছে। আল্লাহ তোমার হত্যাকারীদের উপর লানত বর্ষণ করুক।”
এই বক্তব্য একদিকে যেমন ইমাম আলী (আ.)-এর ভবিষ্যৎ শাহাদতের দিক ইঙ্গিত করে, অন্যদিকে তাঁর হত্যাকারীদের প্রতি নিন্দাও প্রকাশ করে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হিজরি ৪০ সালে ২১ রমজানে ইমাম আলী (আ.) শাহাদত বরণ করেন ইবনে মুলজিম নামক খারেজির হাতে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
এই রেওয়ায়েত ইসলামের ইতিহাসের একটি শক্তিশালী দলিল হিসেবে বিবেচিত, যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংকট, ফিতনা এবং ইমাম আলী (আ.)-এর জীবন ও শাহাদতের প্রতিচিত্র অঙ্কন করেছেন। একে শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত উপদেশ নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক ঘোষণাও বলা যায়।
উপসংহার
এই রেওয়ায়েত বর্তমান যুগে মুসলিম সমাজের জন্য একটি শিক্ষণীয় বার্তা বহন করে। তা হলো—অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান, ধৈর্য ধারণ এবং আত্মত্যাগের মহত্ত্ব। একইসাথে, ইতিহাসের সত্যকে চিনে নেওয়ার আহ্বানও এই বাণীতে প্রতিফলিত হয়।
আপনার কমেন্ট