শনিবার ১০ মে ২০২৫ - ১২:০৯
মহান নেতার বার্তা: একটি সভ্যতাগঠক হাওজার জন্য নির্দেশিকা

কিছু মানবিক বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মী, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বার্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিশ্লেষণ করে বলেন-এই বার্তাটি একটি সভ্যতাগঠক হাওজা গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতাগুলি স্পষ্ট করে।

হাওজা নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ শাইখ আবদুল করীম হায়রী ইয়াজদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ক্বুম ইসলামি হাওজার শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সর্বোচ্চ নেতার তাৎপর্যপূর্ণ ও কৌশলগত বার্তাটি বিভিন্ন দিক থেকে মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ ও পুনঃপাঠের দাবি রাখে। এই লক্ষ্যে হাওজাহর অফিসিয়াল মিডিয়া ধারাবাহিক প্রতিবেদন ও কলাম আকারে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে।

নিচে দেওয়া হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু খ্যাতনামা শিক্ষক ও মানবিক বিজ্ঞানের বিশ্লেষকদের দৃষ্টিকোণ থেকে মহান নেতার বার্তার গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহের ব্যাখ্যা:

সভ্যতাকেন্দ্রিক জ্ঞান উৎপাদন কাঠামো

ড. হামিদ মালেকজাদেহ (কাশান বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, হাওজা কেবল দাওয়াতি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি জ্ঞান উৎপাদনের কেন্দ্র যা বিশ্বাসভিত্তিক জীবনধারাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। এই বার্তায় তিনি বলেন, কোম হাওজার ইতিহাসকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত করে দেখলে বোঝা যায় যে এটি একটি সভ্যতামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে।

ইমাম খোমেইনির আন্দোলন: হাওজার ঐতিহাসিক ফসল

তিনি ব্যাখ্যা করেন, হাওজার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঐতিহাসিক ও সভ্যতাগত প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে হয়েছিল। আয়াতুল্লাহ হায়রীর নেতৃত্বে যখন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল, তখন হাওজা একটি এমন জ্ঞানকেন্দ্র হয়ে ওঠে যা সমাজকে ইসলামী মূল্যবোধে পুনঃগঠনের উপযোগী করে তোলে। এই প্রেক্ষাপটেই হাওজাহ ইমাম খোমেইনির মতো চিন্তাবিদকে উপহার দেয়।

সভ্যতাগঠক হাওজাহর চাহিদা ও দায়িত্ব

সাংবাদিক মোস্তফা কোরবানী বলেন, সাম্প্রতিক শতকে হাওজাহর কার্যক্রম ব্যক্তিক পর্যায় থেকে সমাজগঠনের পর্যায়ে রূপান্তরিত হয়েছে। যদিও অতীতে ধর্মীয় পণ্ডিতরা সামাজিক নেতৃত্বে অংশ নিয়েছেন, তবে ইসলামী বিপ্লবই প্রথম হাওজাকে সরাসরি সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়।

ইসলামী বিপ্লব ও হাওজাহর সভ্যতাগঠক দায়িত্ব

তিনি আরও বলেন, ইসলামী বিপ্লবের পর হাওজাহর দায়িত্ব কেবল দাওয়াত নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও তা দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। সর্বোচ্চ নেতা তাঁর বার্তায় বলেন- ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর এমন বহু বিষয়ের ফিকহি ব্যাখ্যা প্রয়োজন, যা পূর্বে আলোচিত হতো না, যেমন: সরকারের ও জনগণের সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক নীতি, অর্থনৈতিক কাঠামো, ইনসাফের সংজ্ঞা ইত্যাদি।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রাণবন্ত ইজতিহাদ জরুরি

কোরবানী বলেন, আজকের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো হাওজাহ কীভাবে আধুনিক শাসনব্যবস্থার সমস্যাগুলো সমাধানে ফিকহ ব্যবহার করবে। অতীতে শুধু ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব থাকলেও, এখন হাওজার ওপর জোরালো দায়িত্ব হলো ইসলামী সভ্যতা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করা।

সভ্যতাগত ভবিষ্যতের দায়িত্বে হাওজা

গবেষক ও লেখক আব্বাস বনি-আসাদি বলেন, সর্বোচ্চ নেতার বার্তা কেবল ইতিহাসের স্মরণ নয়, বরং এটি হাওজার ভবিষ্যৎ পথনকশা। এই বার্তায় "بلاغ مبین" (স্পষ্ট বার্তা) কেবল প্রচার নয়, বরং জাতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশও বটে।

আধুনিক চাহিদার উত্তরদানে ফিকহি কাঠামো নির্মাণ

এই বার্তায় বলা হয়েছে, হাওজাহকে সামাজিক ফিকহ, শাসনব্যবস্থা, অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবার ইত্যাদি বিষয়ে কাঠামোগত জ্ঞান উৎপাদন করতে হবে। কোম আজ সেই ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী যা এক সময় উসমানী খেলাফতের পতনের প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছিল।

সংগ্রামী হাওজাহই সভ্যতাগঠনের প্রধান হাতিয়ার

সবশেষে বার্তায় বলা হয়, হাওজাকে সংগ্রামী মনোভাব নিয়ে সমাজে কার্যকর, জীবন্ত ও প্রতিরোধমূলক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। কেবল তখনই এটি আধুনিক সভ্যতার বিকল্প পথ দেখাতে পারবে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha