শনিবার ২৪ মে ২০২৫ - ১৪:৩২
ইয়েমেন ও গাজা আমেরিকার শান্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের স্পষ্ট প্রমাণ

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের জুমার ইমাম আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইয়াসিন মুসাভি বলেছেন, “আলোচনা দুর্বলতা ও আত্মসমর্পণের ভিত্তিতে হওয়া উচিত নয়, বরং তা সত্যতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: নাজাফের হাওজায়ে ইলমিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষক আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইয়াসিন মুসাভি গতকাল জুমার খুতবায় অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক নীতির সমালোচনা করে জোর দিয়ে বলেছেন যে, “আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি মূলোৎপাটন এবং একটি জাতীয় ও স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইরাক কখনই প্রকৃত স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারবে না।” 

তিনি সতর্ক করে বলেন যে, “বিদেশি শক্তির উপর নির্ভরশীলতা সার্বভৌমত্বকে দুর্বল ও স্বাধীনতা ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনে না। বিদেশিদের সাথে আলোচনা আত্মসমর্পণের ভিত্তিতে নয়, বরং শক্তি ও জাতীয় মর্যাদার ভিত্তিতে হতে হবে।” 

খুতবার রাজনৈতিক অংশে, আয়াতুল্লাহ মুসাভি ওয়াশিংটনে ইহুদিবাদী শাসনের দূতাবাসের দুই কর্মচারীর হত্যার কথা উল্লেখ করে এটিকে “পশ্চিমের দ্বিমুখী মানদণ্ড” এর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর নির্বাচিত প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “তারা দুই জনের মৃত্যুতে হইচই করে, কিন্তু গাজায় প্রতিদিন শত শত নিরপরাধ নাগরিকের হত্যার মুখে মৃত্যুর মতো নীরবতা পালন করে। তারা ইসরাইলকে একটি স্বীকৃত দেশ মনে করে, কিন্তু আমরা এটিকে একটি অবৈধ দখলদার শাসন হিসেবে বিবেচনা করি এবং এই বিশ্বাস কখনোই পরিবর্তন হবে না।” 

এরপর তিনি মার্কিন সরকারের নীতি, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সময়কালের সমালোচনা করে বলেন, “কিভাবে শান্তির কথা বলা যায়, যখন আমেরিকার আচরণ হুমকি ও ধ্বংসের উপর ভিত্তি করে? ইয়েমেন ও গাজা আমেরিকার শান্তির প্রতিশ্রুতির ব্যর্থতার স্পষ্ট প্রমাণ, বিশেষত যখন একটি আমেরিকান-ইসরাইলি বন্দী মুক্তির পর আমেরিকা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হবে, ইসরাইলি সৈন্যরা পিছু হটবে এবং মানবিক সাহায্য পাঠানো হবে; কিন্তু এর কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি।” 

আয়াতুল্লাহ মুসাভি ইরাক ও অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতাদের আমেরিকার প্রতিশ্রুতিতে অবিশ্বাস করার আহ্বান জানিয়ে জোর দিয়ে বলেন, “আলোচনা দুর্বলতা ও আত্মসমর্পণের ভিত্তিতে হওয়া উচিত নয়, বরং তা সত্যতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। সাদ্দাম হোসেনের আমেরিকাকে বিশ্বাস করার ভুল আবার পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়; এর পরিণতি এখনও সবার স্মৃতিতে আছে।” 

তিনি ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পারমাণবিক আলোচনারও উল্লেখ করে বলেন, “মহান নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এই আলোচনায় এই নীতিতে অটল যে আমেরিকাকে বিশ্বাস করা যায় না এবং আলোচনা দলকে পূর্ণ সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে।” 

বাগদাদের জুমার ইমাম এরপর ইরাকের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে আলোকপাত করে সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে সামরিক প্রশিক্ষণ কোর্সে দুজন ক্যাডেটের মৃত্যুর কথা বলেন। তিনি এই কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য ঘুষের সন্দেহের কথা উল্লেখ করেন যা যোগ্য স্বতন্ত্রতাকে বাদ দিয়েছে এবং প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল স্তরে তদন্ত ও তল্লাশির তাগিদ করেন। 

বসরা প্রদেশের কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করতে গিয়ে আয়াতুল্লাহ মুসাভি বলেন, “দরিদ্র পরিবারগুলোর স্বল্প পরিসরের কংক্রিটের ঘরবাড়ি অবৈধ নির্মাণের অজুহাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যারা বেআইনিভাবে বিশাল জমি দখল করেছে আর যারা শুধুমাত্র পরিবারের বসবাসের জন্য ছোট্ট একটি ছাদ তৈরি করেছে - উভয়কে একই চোখে দেখা চরম অবিচার।” এ প্রসঙ্গে তিনি বিদেশি কোম্পানিদের সাথে সম্পাদিত সন্দেহজনক চুক্তির মাধ্যমে বিশাল ভূমি দখলের পেছনের দুর্নীতির কথাও উল্লেখ করেন।

আয়াতুল্লাহ মুসাভি বলেন, “দুর্নীতি এখন আর নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পদে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি নীতিহীন রাজনীতিবিদদের একটি জটিল নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায়, প্রথম শিকার সাধারণ মানুষ, দরিদ্র ও নির্যাতিতরা।” 

বাগদাদের জুমার ইমাম তাঁর বক্তব্য সমাপ্ত করতে গিয়ে সরাসরি কর্তৃপক্ষকে সমালোচনা করে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না, যতক্ষণ না দুর্নীতিতে জড়িত এই ব্যবস্থাপনাকে আমূল পরিবর্তন করা হয়। জনগণ প্রকৃত মুক্তি কামনা করে, যা কেবল দুর্নীতির সম্পূর্ণ উৎখান এবং ইরাকে একটি ন্যায়ভিত্তিক, স্বাধীন ও প্রকৃত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha