হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত খ্যাতিমান কায়েম (আ.ফা.) হাওজার প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী আসগর হাশেমি ইলিয়া, যিনি একজন দারসে আখলাক তথা নৈতিকতার শিক্ষক, তিনি তার সাপ্তাহিক নৈতিক সমাবেশে “সাহিফায়ে সাজ্জাদিয়ার অষ্টম দোয়ার ব্যাখ্যা” শীর্ষক বক্তব্য দেন। তিনি দোয়ার এই অংশের ব্যাখ্যা করেন,
وَ نَعُوذُ بِکَ... أَنْ یَسْتَحْوِذَ عَلَیْنَا الشَّیْطَانُ
হে আল্লাহ! আমরা শয়তানের প্রভাব থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
তিনি বলেন, মানুষকে সর্বদা দুটি ধ্বংসাত্মক শক্তি—শয়তান ও নফসের কুপ্রবৃত্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নিতে হবে। মানুষের মধ্যে ফেরেশতা ও বিবেক একদিকে, আর শয়তান ও নফস অন্যদিকে—এদের মধ্যে নিরন্তর যুদ্ধ চলমান। মানুষকে এমন একটি নৈতিক শক্তি অর্জন করতে হবে, যার মাধ্যমে সে সব নফসানি চাহিদা ও শয়তানের প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। আত্মা ও হৃদয়কে কিয়ামত পর্যন্ত পবিত্র রাখতে হলে শয়তান ও নফসকে চিনতে হবে এবং কুরআন ও আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষা অনুযায়ী তাযকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও জিহাদে নফস (নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম) করতে হবে।
তিনি কুরআন ও হাদিসের আলোকে শয়তানের পরিচয় এবং সে কীভাবে বান্দাদের সরল পথ থেকে গোমরাহ করে, তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, শয়তান যখন আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হয়, তখন সে আল্লাহকে বলেছিল:
ثُمَّ لَآتِیَنَّهُمْ مِنْ بَیْنِ أَیْدِیهِمْ وَ مِنْ خَلْفِهِمْ وَ عَنْ أَیْمَانِهِمْ وَ عَنْ شَمَائِلِهِمْ
[সুরা আরাফ, আয়াত ১৭] অর্থাৎ, “আমি তাদের সামনে, পেছনে, ডানে ও বামে থেকে তাদেরকে ধোঁকা দেব।”
ইমাম বাকির (আ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেন, শয়তান মানুষের সামনে থেকে আখিরাতের ব্যাপারে ধোঁকা দেয়, তাকে সহজভাবে উপস্থাপন করে। পেছন থেকে দুনিয়ার মোহ দেখায়, অর্থ-সম্পদ সংগ্রহে উৎসাহিত করে কিন্তু আল্লাহর হক আদায় ও গরিবদের সাহায্য করতে বাধা দেয়।
তেহরানের কায়েম(আ.) হাওজার প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, أَیْمَانِهِمْ (ডান দিক) দ্বারা দ্বীনকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে শয়তান সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং গোমরাহিকে সুশোভিত করে। شَمَائِلِهِمْ (বাম দিক) দ্বারা নফসের কামনা-বাসনা ও শাহওয়াতকে বোঝায়, যার মাধ্যমে শয়তান মানুষের হৃদয়ে আধিপত্য বিস্তার করে। এভাবে শয়তান চেষ্টা করে মানুষের ঈমান ও দ্বিনি আকিদাকে নষ্ট করতে এবং নফসকে উন্মুক্ত করে মানুষের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ন্ত্রণে নিতে। পারিবারিক ও সামাজিক সব দ্বন্দ্ব-কলহের পেছনে শয়তানের প্রভাব রয়েছে।
এই নৈতিক শিক্ষক শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার উপায়ও বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সুরা নাহলের ৯৯ নং আয়াত অনুযায়ী, যদি কেউ আল্লাহর উপর ঈমান ও তাওয়াক্কুল রাখে, শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। হযরত আইয়ুব (আ.)-এর জীবনই এর প্রমাণ। শয়তান আল্লাহর অনুমতি নিয়ে তাঁর সম্পদ ও স্বাস্থ্য ধ্বংস করেছিল, কিন্তু তাঁর ঈমান নষ্ট করতে পারেনি।
আয়াতুল্লাহ হাশেমি ইলিয়া বলেন, কিছু রেওয়ায়েত অনুযায়ী, পাঁচটি গুণ মানুষের মধ্যে থাকলে শয়তানের চালাকি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, যথা:
১. আল্লাহকে খাঁটি মনে চাওয়া এবং শুধু তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা,
২. সব কাজে আল্লাহর উপর ভরসা করা,
৩. নিয়মিত আল্লাহর জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা,
৪. অন্য মানুষের কল্যাণ কামনা করা ও তাদের সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করা,
৫. মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করা ও অধৈর্য্য না দেখানো!
শয়তান সর্বদা এই গুণগুলো নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই নিয়মিত মুহাসাবা (আত্মসমালোচনা) এবং উস্তাযের নসিহত (গাইডেন্স) প্রয়োজন। এই গুণগুলো অর্জন করলে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
আপনার কমেন্ট