হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীকে হুমকির প্রেক্ষিতে দেশের একদল ইনকিলাবি ওয়ায়েজের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি আবেদন জানানো হয়, যাতে আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক জায়োনিজমের অস্তিত্ব ও সব স্বার্থের বিরুদ্ধে একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারির আহ্বান করা হয়। আবেদনে বলা হয়:
মহামান্য আয়াতুল্লাহিল উজমা নূরী হামাদানি (দা.মা)-এর সমীপে:
السلام علیکم و رحمة الله
সালাম, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ২৮ খোরদাদ ১৪০৪ (১৭ জুন ২০২৫) তারিখে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধী প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ও শিয়া মারজায়ে তাকলিদ আয়াতুল্লাহুল উজমা খামেনেয়ী (দা.যি)-কে হত্যার হুমকির জবাবে আপনার জারি করা বিবৃতির জন্য। সেইসাথে আশা করি, আপনি আগের মতোই প্রজ্ঞাবান ও সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক ঔদ্ধত্যবাদী ফ্রন্টের মোকাবেলায় অবিচল থাকবেন।
যেমনটি আপনি অবগত আছেন:
১. এই হত্যার হুমকি মূলত শত্রুর বিশ্লেষণগত ভুল ও দীনী নেতৃত্ব তথা মারজায়েতের সাংগঠনিক শক্তিকে অবমূল্যায়নের পরিণতি। তারা বোঝেনি, এই নেতৃত্বের আহ্বানে গোটা উম্মাহ একত্র হয়ে ঔদ্ধত্যবাদের অস্তিত্বকেই কাঁপিয়ে দিতে পারে।
২. আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক সায়োনিস্ট ফ্রন্ট তাদের এই মারাত্মক ভুলের মাধ্যমে ইসলামি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ও অতুলনীয় সম্পদকে হুমকির মুখে ফেলেছে। যদি ইসলামের পক্ষ থেকে তাদের অস্তিত্ব ও স্বার্থকে লক্ষ্য করে যথাযথ জবাব না দেওয়া হয়, তাহলে তারা তাদের এই ভুল অবস্থান পরিবর্তন করবে না।
৩. ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলামবিদ্বেষী শক্তিগুলো ফতোয়ার কার্যকারিতা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে অবহিত। মির্জা শিরাজির তামাক ফতোয়া থেকে শুরু করে ইমাম খোমেনির (রহ.) পক্ষত্যাগী সালমান রুশদির বিরুদ্ধে ঘোষিত ফতোয়া পর্যন্ত—এসবই প্রমাণ করে, একটি সঠিক সময়ে জারি হওয়া ইসলামি ফতোয়া কতটা কার্যকর ও প্রতিরোধশীল শক্তি। যদি এই ঐতিহাসিক ফতোয়াগুলো না থাকত, তবে গত কয়েক দশকে বারবার ইসলামের পবিত্রতা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদা লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত দেখা যেত।
৪. আজ, যখন আমেরিকার অপরাধী সরকার এবং দখলদার জায়নিস্ট বাহিনী ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পবিত্র ভূখণ্ডে সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে—এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন এক ঐতিহাসিক ও দৃঢ় ফতোয়া, যা শত্রুর জন্য এই ধরনের হুমকির মূল্য এতটাই বাড়িয়ে তুলবে যে তারা ভবিষ্যতে আর তা উচ্চারণ করার সাহসও করবে না।
অতএব, আমরা বিনীত অনুরোধ করছি—আপনি যিনি যুগে যুগে ধর্ম ও ইমাম মাহদির (আ.জ.) রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম রক্ষক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন, আপনি যেন একটি সুস্পষ্ট, দৃঢ় ও ইতিহাস-সৃষ্টি-ক্ষম ফতোয়া জারি করেন—যা আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক সায়োনিজমের অস্তিত্ব ও স্বার্থকে প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ্য করবে। এর মাধ্যমে একদিকে তাদের ভ্রান্ত হিসাব-নিকাশ সংশোধিত হবে, অন্যদিকে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত শক্তি বিশ্ববাসীর সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
আপনার হিকমতপূর্ণ সিদ্ধান্তের ওপরই আমরা আমাদের আশা অর্পণ করছি।
ইসলামী বিপ্লবী ওয়ায়েজদের সংগঠন
৭ তির ১৪০৪ (২৭ জুন ২০২৫)
আয়াতুল্লাহ নূরী হামাদানির জবাব:
بسم الله الرحمن الرحیم
السلام علیکم
আপনারা যে বিবৃতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, তাতে যেমন বলা হয়েছে—শিয়া মারজায়াত ও বিশেষ করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী (দা.যি)-এর মর্যাদাকে অবমাননা করা, মূলত ইসলাম ধর্মের মৌলিক ভিত্তিকে অবমাননার শামিল।
আজকের দিনে তিনি (রাহবার) পূর্ণ সাহস ও শক্তি নিয়ে গোটা ইসলামি উম্মাহর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, তাঁর প্রতি সমর্থন জানানো ফরজ এবং এমন এক পরিস্থিতিতে, যখন ইসলাম, কুরআন ও আহলে বাইতের (আ.) সমস্ত শত্রু একত্রিত হয়েছে, তখন তাঁকে দুর্বল করা হারাম।
তাই, কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্র যদি তাঁকে বা শিয়া মারজায়াতকে হুমকি দেয় কিংবা আক্রমণ করে, তবে তা “মুহারিব” (আল্লাহ ও রসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী) গণ্য হবে।
এবং কেউ যদি এই অন্যায়ের সহযোগী হয়, তাহলে তার শাস্তিও একই ফতোয়ার আওতাভুক্ত হবে।
আমরা প্রার্থনা করি, মহান আল্লাহ তাআলা যেন হযরত বাকিয়্যাতুল্লাহুল আযম (আ.জ.)-এর পবিত্র সত্তা আমাদের উপর সন্তুষ্ট রাখেন।
হুসেইন নূরী হানাদানি
৮ তির ১৪০৪ (২৮ জুন ২০২৫)
আপনার কমেন্ট