হাওজা নিউজ এজেন্সি এজেন্সি: ইসলামী মো’তালেফা পার্টির সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতে আয়াতুল্লাহিল উজমা জাওয়াদী আমুলি বলেন, আমরা এমন একটি সংস্কৃতি ও চিন্তার উত্তরাধিকারী, যা শুধুমাত্র অতীতেই গৌরবময় ছিল না, বরং ভবিষ্যতের পথও উজ্জ্বল করতে সক্ষম। এই জাতি তার সম্মান, যুক্তিবোধ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় থেকে কখনোই পিছু হটবে না।
কারবালা: কেবল অশ্রু নয়, চেতনার পাঠ
মহররমের শোকের দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারবালার ঘটনা আমাদের জন্য এক অনন্য আদর্শ। এ ঘটনার গুরুত্ব শুধু কান্না ও শোকেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর প্রকৃত মূল্য নিহিত রয়েছে এর অন্তর্নিহিত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বার্তায়। ইমাম হুসাইনের আন্দোলন আমাদের শিক্ষা দেয় যে, উদ্দেশ্য যদি পবিত্র হয়, তা অর্জনের পথও হতে হবে বৈধ ও সৎ।
তিনি কুরআনি শিক্ষার আলোকে বলেন,
مَنْ حَاوَلَ أَمْراً بِمَعْصِیةِ اللّه کَانَ أَفْوَتَ لِمَا یرْجُو وَ أَسْرَعَ لِمَجِیءِ مَا یحْذَر
যে কেউ পাপের মাধ্যমে কোনো লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে, সে তার প্রত্যাশিত ফল অর্জন করতে ব্যর্থ হয় এবং দ্রুত ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হয়।
জবরববাদ বা নিয়তিবাদ বনাম কারবালার চেতনা
তিনি আরও বলেন, উমাইয়া খলিফারা বছরের পর বছর ধরে “জবরবার বা নিয়তিবাদ” প্রচার করে নিজেদের অপরাধকে আল্লাহর নামে বৈধতা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। এর স্পষ্ট দৃষ্টান্ত হলো, কারবালার পর ইবনে জিয়াদের সেই কুখ্যাত প্রশ্ন: “তোমার ভাইয়ের সঙ্গে আল্লাহ কী করল?
হযরত জয়নব (সা.আ.) এর উত্তরে বলেছিলেন, “আমি তো শুধু সৌন্দর্যই দেখেছি!”
এই উত্তরের মধ্য দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, শোক নয়, এটি ছিল এক সচেতন, ঈমানি ও রাজনৈতিক জবাব—একটি আত্মমর্যাদাপূর্ণ জবাব।
ইরানি জাতির ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মর্যাদা
আয়াতুল্লাহ আমুলি বলেন, “ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলন শুধু এক গৌরব নয়, আমাদের পরিচয়ের একটি স্তম্ভ। পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে, ইরানি জাতি নিজেও একটি মহান ও গভীর ঐতিহ্যবাহী জাতি। আপনি যদি সমগ্র আমেরিকা ঘুরেও দেখেন, কোনো প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাবেন না। অথচ ইরানের প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে প্রাচীন শিল্প, জ্ঞানচর্চা ও চিন্তার নিদর্শন। এই জাতি একটি শিকড়-গাঁথা ও সভ্য জাতি।”
আজকের ইরান: গভীর অন্তর্দর্শন ও কারবালার প্রভাব
তিনি বলেন, “পশ্চিমা বিশ্ব আজ আমাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। তথাকথিত আধুনিক রাষ্ট্রগুলো যেমন আমেরিকা, মুসলিম জাতি ও আমাদের ধর্মীয় মহান ব্যক্তিদের অবমাননা করছে। অথচ বাস্তবতা হলো, আমরা এমন এক সংস্কৃতির উত্তরসূরি, যা অতীতে গৌরবময় ছিল এবং ভবিষ্যতেও পথ দেখাবে।”
এই জাতি সহজে তার সম্মান, যুক্তিবোধ ও ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ বিসর্জন দেবে না।
জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জাতীয় ঐক্য একটি মহান নিয়ামত, যার কদর করা ও রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সব পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ড এই ঐক্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠা উচিত।”
জ্ঞানী বনাম দক্ষ পরিচালক: একটি শিক্ষা
তিনি 'নাহজুল বালাগা'-র আলোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তফাৎ তুলে ধরেন, “একজন ‘ভালো আলেম’ হওয়া এবং ‘দক্ষ প্রশাসক’ হওয়া এক জিনিস নয়।”
উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেন, ইমাম আলী (আ.) হযরত কুমাইলকে একটি এলাকার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু শত্রুরা সেই এলাকা লুট করে নেয়। এরপর ইমাম (আ.) কুমাইলকে চিঠি লেখেন, যা ‘নাহজুল বালাগা’য় সংরক্ষিত আছে। তাতে ইঙ্গিত করা হয়, সকলেই কেবল 'দোয়ায়ে কুমাইল' পাঠের জন্যই উপযুক্ত, কিন্তু প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য নয়।
আপনার কমেন্ট