হাওজা নিউজ এজেন্সি: চিঠিটি ভ্যাটিকানে ইরানের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয় এবং হাওযা নিউজ এজেন্সি কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এতে আয়াতুল্লাহ নূরী হামেদানি জিজ্ঞেস করেন:
“যদি যীশু (আঃ) আজ জীবিত থাকতেন, তাহলে কি তিনি গাজার ভয়াবহ অবস্থা ও দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ সহ্য করতেন?”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদি ধর্মসহ সকল আসমানী ধর্মই মানব মর্যাদাকে তাদের মূল শিক্ষা হিসেবে ধারণ করে, এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা শ্রেণিভিত্তিক সব ধরনের বৈষম্যকে ঘৃণার চোখে দেখে।
তিনি ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে পোপকে, নিরীহ মানুষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান নেওয়া এবং গাজার জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত “অমার্জনীয় অপরাধের” দৃপ্ত প্রতিবাদ জানাতে আহ্বান জানান।
আয়াতুল্লাহ হামেদানি বলেন, “আসমানী ধর্মগুলোর দৃষ্টিকোণ থেকে খাদ্য, পানি ও ওষুধ থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা শুধু অন্যায় নয়—এটি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার সঙ্গেও সরাসরি সাংঘর্ষিক।”
তিনি গাজায় ইসরায়েলি অবরোধকে একটি নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক জনগণকে অনাহারে রাখা এবং মানবিক সহায়তা আটকে রাখা শুধু ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের পরিপন্থীই নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।
তিনি আরও বলেন, “আব্রাহামীয় ধর্মসমূহ—ইহুদিবাদ, খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলাম—ন্যায়বিচার, সহানুভূতি ও নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। তাই জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নিরপরাধ মানুষ মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার রাখে।”
আয়াতুল্লাহ নূরী হামেদানি পোপের গাজার মানবিক সংকট নিয়ে প্রকাশিত সাম্প্রতিক উদ্বেগের প্রশংসা করেন, তবে তিনি আরও সাহসী, কার্যকর ও প্রত্যক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যাতে এই চলমান গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা যায়।
চিঠিতে তিনি প্রশ্ন তোলেন: “যা গাজায় ঘটছে, তা কোনো ধর্মীয়, মানবিক বা নৈতিক মানদণ্ডেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি হযরত মূসা, যীশু এবং মুহাম্মদ (সঃ) আজ আমাদের মাঝে থাকতেন, তাহলে কি তারা এই বর্বরতার সামনে নীরব থাকতেন?”
তিনি ধর্মের অপব্যবহার ও সহিংসতা (legitimization) এর উদ্দেশ্যে ধর্মকে হাতিয়ার বানানোর প্রবণতা প্রত্যাখ্যান করতে বিশ্ব ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান এবং উল্লেখ করেন,
“গত আট দশক ধরে ইসরায়েল একটি তথাকথিত ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার অজুহাতে নানাবিধ অপরাধ করে চলেছে।”
চিঠির শেষাংশে আয়াতুল্লাহ নূরী হামেদানি বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান, যেন তারা একত্রিত হয়ে গাজার নিপীড়িত জনগণের পক্ষে অবস্থান নেন এবং আল্লাহপ্রদত্ত ন্যায়, করুণা ও মানবতার মূলনীতির আলোকে ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
আপনার কমেন্ট