শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫ - ০৯:৪৯
গাজার পাশে দাঁড়ানো ইসলামী উম্মাহর আলেমদের জন্য এক ঐশী দায়িত্ব

গাজায় দখলদার ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে কোমের হাওজা ইলমিয়ার শিক্ষক পরিষদ (جامعه مدرسین) মুসলিম বিশ্বের আলেম, চিন্তাবিদ ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ খোলা চিঠি প্রকাশ করেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ধর্মীয় নগরীর হাওজায়ে ইলমিয়ার শিক্ষক পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্ব আজ গাজায় অব্যাহত গণহত্যা, শিশুদের ক্ষুধায় মৃত্যু আর একটানা মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এ অবস্থায় নীরবতা কোনো বিকল্প নয়। ইসলামি উম্মাহর আলেমগণ যদি এখনও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে মাজলুমদের পাশে না থাকেন, তবে ইতিহাসও, বিবেকও, পরকালও তাদের এই নিস্ক্রিয়তার জবাব চাইবে। ঈমানের কণ্ঠে অত্যাচারের প্রাচীর কাঁপিয়ে তোলার এখনই সময়।

বিবৃতিটি নিম্নরূপ:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.), তাঁর পবিত্র আহলুল বাইত এবং তাঁর বিশ্বস্ত ও অনুগত সাহাবিদের ওপর।

আল্লাহতায়ালা বলেন,

وَ ما لَکُمْ لا تُقاتِلُونَ فی‏ سَبیلِ اللَّهِ وَ الْمُسْتَضْعَفینَ مِنَ الرِّجالِ وَ النِّساءِ وَ الْوِلْدانِ الَّذینَ یَقُولُونَ رَبَّنا أَخْرِجْنا مِنْ هذِهِ الْقَرْیَةِ الظَّالِمِ أَهْلُها وَ اجْعَلْ لَنا مِنْ لَدُنْکَ وَلِیًّا وَ اجْعَلْ لَنا مِنْ لَدُنْکَ نَصیرا

“তোমরা কেন আল্লাহর পথে এবং সেইসব দুর্দশাগ্রস্ত পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করবে না, যারা বলছে: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জালিম জাতির জনপদ থেকে মুক্তি দাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ থেকে কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী নিযুক্ত করো।’”— (সূরা নিসা: ৭৫)

সম্মানিত আলেমগণ, হাওজা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানপ্রভা শিক্ষকবৃন্দ!

গাজার অবরুদ্ধ ও নির্যাতিত জনগণ আজ মানব ইতিহাসের এক ভয়াবহ গণহত্যার শিকার। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং ন্যূনতম জীবনোপকরণ থেকে বঞ্চিত এই মানুষগুলোর আর্তনাদ আকাশে পৌঁছে গেছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তথাকথিত কিছু মুসলিম রাষ্ট্র নীরবতা অবলম্বন করছে—এমনকি দখলদারদের সঙ্গে আঁতাত করছে।

এই পরিস্থিতি কুফরি শক্তির পূর্ণ ঐক্যকে ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। পবিত্র কুরআন আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে:

لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَداوَةً لِلَّذینَ آمَنُوا الْیَهُودَ وَ الَّذینَ أَشْرَکُوا.

“নিশ্চয়ই আপনি দেখবেন, মুমিনদের প্রতি সবচেয়ে তীব্র শত্রুতা পোষণ করে ইয়াহুদিরা ও মুশরিকরা।”—(সূরা মায়িদা: ৮২)

ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি তাদের ষড়যন্ত্র ও শত্রুতা প্রকাশ্য ও কিয়ামত অবধি বহাল থাকবে। এজন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন,
یا أَیُّهَا الَّذینَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الْیَهُودَ وَ النَّصاری‏ أَوْلِیاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِیاءُ بَعْضٍ وَ مَنْ یَتَوَلَّهُمْ مِنْکُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لا یَهْدِی الْقَوْمَ الظَّالِمین‏. المائدة
“হে ঈমানদারগণ! ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের কেউ যদি তাদের বন্ধু গ্রহণ করে, তবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”— (সূরা মায়িদা: ৫১)

আজ যারা চুপ করে আছেন, তারা ইসলামের চেতনাকেই আঘাত করছেন। কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন।

আজও আমাদের কানে ধ্বনিত হচ্ছে ইমাম আলী (আ.)-এর সেই বজ্রনিনাদ, যখন তিনি বলেন,

«أَمَا وَ الَّذِی فَلَقَ الْحَبَّةَ وَ بَرَأَ النَّسَمَةَ لَوْ لَا حُضُورُ الْحَاضِرِ وَ قِیَامُ الْحُجَّةِ بِوُجُودِ النَّاصِرِ وَ مَا أَخَذَ اللَّهُ عَلَی الْعُلَمَاءِ أَلَّا یُقَارُّوا عَلَی کِظَّةِ ظَالِمٍ وَ لَا سَغَبِ‏ مَظْلُومٍ…

“আল্লাহর শপথ, যদি জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি না থাকত, যদি আলেমদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দায়িত্ব না থাকত যে, তারা জালিমের ভোগবিলাস ও মাজলুমের ক্ষুধা দেখে নীরব থাকবেন না, তাহলে আমি শাসনকে কাপড়ে জড়িয়ে তার থেকে দূরে থাকতাম...”

এই বক্তব্য আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, নেতৃত্ব ও জ্ঞানের মর্যাদা তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা উম্মাহর মুক্তি ও ন্যায়ের পক্ষে ব্যবহৃত হয়।

আজ আলেমদের দায়িত্ব কী?
স্পষ্টভাবে ইহুদি দখলদারদের জঘন্য অপরাধের নিন্দা করা। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নির্লিপ্ততা ও পশ্চিমাদের দ্বিমুখিতা তুলে ধরা। নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য সোচ্চার হওয়া। হাওজা, বিশ্ববিদ্যালয় ও মসজিদকে গাজার সহায়তায় সচেতনতার কেন্দ্রে পরিণত করা।মুসলিম জাতিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেতনা জাগানো।

হে আলেম সমাজ! মনে রাখবেন, আজ যদি আমরা চুপ থাকি, তবে আগামী প্রজন্ম আমাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জবাব চাইবে।

বিবৃতির শেষে বলা হয়, কোমের হাওজায়ে ইলমিয়ার শিক্ষক পরিষদ দখলদার ইসরায়েলের এই অমানবিক গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং একইসঙ্গে বিশ্বের আলেমসমাজের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে— তারা যেন নীরবতা ভেঙে, দ্বিধাহীন কণ্ঠে, ঈমান ও মানবতার পক্ষে অবস্থান নেন।


وَ سَیَعْلَمُ الَّذینَ ظَلَمُوا أَیَّ مُنْقَلَبٍ یَنْقَلِبُون‏

“আর যিনি জুলুম করেছে, তারা শিগগিরই জেনে যাবে কোন (মহা সংকটময়) দিকে ফিরে যাচ্ছে...”— (সূরা শুআরা: ২২৭)

— কোমের হাওজায়ে ইলমিয়ার শিক্ষক পরিষদ

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha