হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের জামিয়া-ই-আয-যাহরা (সা.আ.) শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সদস্য হুরাইয়্যাহ তাবীবিয়ান বলেন, “গাজার মায়েরা এমন এক প্রজন্ম গড়ে তুলছেন, যারা শৈশব থেকেই দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মানসিকতা নিয়ে বড় হচ্ছে। এই মা’দের ভূমিকা শুধু পরিবারেই সীমাবদ্ধ নয়; তাঁরা পুরো জাতির আত্মিক শক্তি।”
শহীদ সন্তানের বিদায়ে অবিচল মা’দের ভাষাহীন বার্তা
তাবীবিয়ান বলেন, “যখন কোনো মা তাঁর সন্তানের লাশ কাঁধে তোলেন, তখন সে শুধু শোক প্রকাশ করেন না—বরং সেই মুহূর্তেই তার চোখে জ্বলে ওঠে প্রতিরোধের অগ্নিশিখা। তাঁর নীরবতা, দৃঢ় চাহনি এবং সন্তানের কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থান—সবই এক মৌন বার্তা: আমরা থেমে যাব না।”
তিনি এক শহিদ মায়ের উক্তি উল্লেখ করেন, “আমাদের রক্ত কুদসের সামনে কিছুই নয়। জিহাদের পথে এগিয়ে চলো।”
অন্য এক শহিদ মায়ের উচ্চারণ ছিল: “বাবা, তোমার রক্ত হাসান ও হুসাইন (আ.)-এর চেয়ে দামী নয়।”
এইসব বাক্য কেবল আবেগ নয়, বরং ঈমান, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর পথে নিষ্ঠার অন্তর্নিহিত প্রকাশ।
হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর আদর্শে গড়ে ওঠা মাতৃত্ব
তাবীবিয়ান ব্যাখ্যা করেন, ইসলামে মায়ের ভূমিকা কেবল স্নেহ ও যত্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এক আদর্শ মুসলিম মা যেমন ছিলেন হযরত ফাতিমা (সা.আ.), তেমনি গাজার মা’রা সন্তানের ধর্মীয়, নৈতিক, সামাজিক ও জ্ঞানচর্চার পথ সুদৃঢ় করে তুলছেন।
তিনি বলেন, “এই মা’রা এমন এক পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করেছেন, যা ভালোবাসা ও আত্মিক অনুপ্রেরণায় পূর্ণ। তাঁদের সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই ইসলামী মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ ও আত্মোৎসর্গের শিক্ষা পায়।”
পিছন থেকে নয়, সম্মুখ সারিতে মায়েরা
তিনি বলেন, “গাজার মা’রা কেবল সন্তান প্রতিপালনেই সীমিত নন; তাঁরা পারিবারিক ও জাতীয় প্রতিরোধের মানসিক শক্তির উৎস। তাঁদের অনেকেই জ্ঞানে, দো’আয় ও উদ্দীপনায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা।”
তারা এমন সন্তান গড়ে তোলেন, যারা জীবনের চেয়ে বড় কোনো লক্ষ্যকে—স্বাধীনতা, মর্যাদা ও কুদস মুক্তিকে—অগ্রাধিকার দেয়। এই প্রজন্মই হয়ে উঠছে প্রতিরোধের উত্তরাধিকার বহনকারী।
মায়ের কোল থেকে জান্নাত পর্যন্ত প্রতিরোধের পথ
হুরাইয়্যাহ তাবীবিয়ান বলেন, “গাজার সংগ্রামী মা’রা ফিলিস্তিনের বীরত্বপূর্ণ আত্মা ও আধ্যাত্মিক অবিচলতার মূল ভিত্তি। তাঁরা মায়ের কোল থেকে জান্নাত পর্যন্ত এই পথকে সাহসিকতা, ঈমান ও আত্মত্যাগের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। তাঁদের কণ্ঠে আজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ফিলিস্তিনের চিরন্তন ডাক: আমরা আছি, আমরা প্রতিরোধ করছি, আমরা বিজয়ের পথে।”
গাজার সংগ্রামী মা’রা কেবল পরিবার নয়, গোটা ফিলিস্তিন জাতির আত্মিক ভিত। তাঁদের সন্তানরাই হয়ে উঠছে শহিদ, নেতা ও কুদস মুক্তির অগ্রপথিক। এই মা’দের চোখে আজও এক দীপ্ত শপথ: প্রতিরোধ শেষ হবে না, যতক্ষণ না ফিলিস্তিন মুক্ত হয়।
আপনার কমেন্ট