হাওজা নিউজ এজেন্সি: দোয়া ও জিয়ারতনামাগুলোতে ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-কে এমনসব বিশেষণ ও গুণে ভূষিত করা হয়েছে, যা তাঁর মর্যাদা, দায়িত্ব এবং পথপ্রদর্শক সত্তার পরিচয় বহন করে। এসব গুণাবলি শুধু তথ্যগত পরিচয় নয়, বরং তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসা দৃঢ় করার একটি চাবিকাঠি হিসেবেও কাজ করে। এই গুণাবলির আলোকে আমরা তাঁর সান্নিধ্যে আরও গভীরভাবে যুক্ত হতে পারি এবং তাঁর উপস্থিতির অনুভূতি আমাদের জীবনে সচল রাখতে পারি।
১. العَلَمُ المَنصُوب বা উত্তোলিত পতাকা– হিদায়তের আলামত
দোয়াসমূহে ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-কে উপমা দেওয়া হয়েছে ‘একটি উত্তোলিত পতাকা’ হিসেবে—যা হিদায়তের প্রতীক। এই পতাকা সর্বদা উঁচুতে থাকে, যেন দূর থেকে পথহারা কাফেলা তা দেখে সঠিক গন্তব্য খুঁজে নিতে পারে।
জিয়ারতে আলে ইয়াসিন (زیارت آل یاسین)-এ বলা হয়েছে:
السَّلَامُ عَلَیکَ أَیهَا العَلَمُ المَنصُوب
তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক—হে উত্তোলিত পতাকা!
এই বিশেষণ জানিয়ে দেয়, তিনি অগোচরে থাকলেও তাঁর আলো নিভে যায়নি; তাঁর উপস্থিতি এখনো পথিকদের দিকনির্দেশনা দেয়।
২. سَفینَةُالنَّجاة বা নাজাতের তরী– মোক্ষের একমাত্র পথ
বিশ্বের প্রলয়ঙ্কর ঝড়, ফিতনা ও বিভ্রান্তির সমুদ্রে যারা নিরাপদে থাকতে চায়, তাদের জন্য ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর আনুগত্য ও পথনির্দেশনা একটি নিরাপদ তরীর মতো। দোয়াসমূহে তাঁর পরিচয় এসেছে এমন এক নৌকা হিসেবে, যাতে আরোহন করলে গন্তব্য মোক্ষ; আর বিমুখ হলে ধ্বংস অনিবার্য।
للَّهُمَّ صَلِّ عَلَی خَلِیفَتِکَ …. سَفِینَةِ النَّجَاةِ
হে আল্লাহ! তোমার সেই প্রতিনিধি ও নাজাতের তরীর ওপর রহমত বর্ষণ করো।
৩. وَارِثُ عُلُومِ النَّبِیین বা নবীদের জ্ঞানের উত্তরাধিকারী
ইমাম মাহদী (আ.ফা.) কেবল একজন ইমাম নন, বরং নবুয়তের সকল জ্ঞান, হেকমত ও হেদায়তের উত্তরাধিকারী। যা কেবল কিতাবি জ্ঞান নয়, বরং নূরের জ্ঞান—যা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্জিত।
জিয়ারতে সর্দাবে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) সম্পর্কে এসেছে:
السَّلَامُ عَلَیکَ یا وَارِثَ عُلُومِ النَّبِیین
হে নবীদের জ্ঞানের উত্তরাধিকারী, তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
السَّلَامُ عَلَیکَ …. الْعِلْمُ الْمَصْبُوب
হে নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞানের ধারক, তোমার প্রতি সালাম।
তাঁর জ্ঞানে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল রহস্য নিহিত; তিনি আল্লাহর ইলহামি শিক্ষার জীবন্ত ধারক।
৪. পবিত্রতা ও নিষ্পাপতা– এক নির্ভুল সত্তা
ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর গুণাবলির কেন্দ্রবিন্দু হলো তাঁর ইসমাত—অর্থাৎ পাপ, ভ্রান্তি ও ত্রুটির সমস্ত স্তর থেকে মুক্ত থাকা। আল্লাহ তাঁকে নিজের হেফাজতে রেখেছেন যেন তিনি প্রতিটি যুগে হেদায়তের নির্ভুল মানদণ্ড হতে পারেন।
ইমাম রেজা (আ.)-এর ভাষায়:
عَصَمْتَهُ مِنَ الذُّنُوبِ وَ بَرَّأْتَهُ مِنَ الْعُیوبِ وَ طَهَّرْتَهُ مِنَ الرِّجْسِ وَ سَلَّمْتَهُ مِنَ الدَّنَس
হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে পাপ থেকে নিরাপদ করেছ, ত্রুটি থেকে মুক্ত করেছ, অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করেছ এবং কলুষতা থেকে রক্ষা করেছ।
৫. مَفزَع বা মজলুমদের ভরসাস্থল– আশ্রয়ের কাঁধ
ইমাম মাহদী (আ.ফা.) হলেন সেই করুণা-নির্ভর ব্যক্তি, যাঁর দয়ার ছায়ায় আশ্রয় নেয় দুনিয়ার সব নিপীড়িত ও নির্যাতিত হৃদয়। দোয়াসমূহে তাঁকে উপস্থাপন করা হয়েছে সেই ‘শেষ ভরসা’ হিসেবে, যাঁর দ্বারস্থ হলে কেউ নিরাশ হয় না।
দু’আ ই আহদ:
وَ اجْعَلْهُ اللَّهُمَ مَفْزَعاً لِمَظْلُومِ عِبَادِکَ…
হে আল্লাহ! তোমার নিপীড়িত বান্দাদের জন্য তাঁকে ভরসাস্থল ও ন্যায়ের রক্ষক বানাও।
দু’আ ই নুদবায় উচ্চারিত হয়:
اللَّهُمَّ وَ نَحْنُ عَبِیدُکَ التَّائِقُونَ إِلَی وَلِیکَ…. عِصْمَةً وَ مَلَاذاً
হে আল্লাহ! আমরা তোমার সেই বান্দা যারা তোমার প্রতিনিধির জন্য উদগ্রীব; তুমি তাঁকে আমাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা বানিয়েছ।
এইসব গুণাবলি শুধু ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-কে চেনানোর জন্য নয়, বরং আমাদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ার পথও উন্মুক্ত করে। তাঁর প্রতি আন্তরিক দৃষ্টি, ভালোবাসা ও অনুসরণই আমাদের আত্মাকে তার আসল গন্তব্যের দিকে এগিয়ে নিতে পারে—আর তা হলো আল্লাহর নৈকট্য।
ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর সঙ্গে সজীব সম্পর্কই একটি আদর্শ সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত।
এই আলোচনা চলমান...
গ্রন্থসূত্র: নেগীনে অফারিনেশ গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত রূপে সংকলিত।
আপনার কমেন্ট