হাওজা নিউজ এজেন্সি: সাইয়্যেদ আবেদি বলেন, “আরবাঈন এখন কেবল শোকানুষ্ঠান নয়; এটি ইমাম হুসাইন (আ.)-এর চিরন্তন আহ্বানের প্রতিফলন—জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, মানব মর্যাদার পক্ষে অবস্থান, ও বিশ্ব বিবেকের জাগরণ।”
ত্যাগ, মুক্তি ও মানবতার জাগরণ
তিনি বলেন, “আরবাঈন কেবল একটি ধর্মীয় স্মারক নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত বার্তা—ত্যাগ, স্বাধীনতা ও নৈতিক চেতনার প্রতীক।
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কারবালার প্রান্তরে উচ্চারিত সেই আহ্বান—অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আজও বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “প্রতিবছর যে লক্ষ লক্ষ মানুষ কারবালার দিকে পদযাত্রা করেন, তা শুধুমাত্র ধর্মীয় কর্তব্যবোধ নয়, বরং ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আদর্শের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। আরবাঈন আজ ন্যায়বিচার ও মানবিক ঐক্যের এক বৈশ্বিক প্রতীক।”
আরবাঈন: সীমানা ও মতাদর্শের ঊর্ধ্বে
সাইয়্যেদ আবেদি বলেন, “আজ আরবাঈন কোনো একটি গোষ্ঠী বা জাতির একক আয়োজন নয়।
মুসলিম ও অমুসলিম, ধনী ও দরিদ্র, নারী ও পুরুষ—সকল বয়স ও শ্রেণির মানুষ সত্য ও মানব মর্যাদার পতাকাতলে একত্রিত হন।
‘লাব্বায়্ক ইয়া হুসাইন’ ধ্বনি আজ বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে শোনা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আরবাঈনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কোনো মতবাদ নয়, বরং ন্যায়বিচারের প্রতি ভালোবাসা এবং জুলুম-অপমানকে প্রত্যাখ্যান করার অভিন্ন মানবিক অনুভূতি।”
কারবালার বার্তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা
প্রশ্ন করা হলে—ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বার্তা কীভাবে বিশ্বব্যাপী আরও কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব তিনি বলেন, “কারবালার ইতিহাসকে ঘিরে নানা রকম বিকৃতি ও প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে।
এর মোকাবিলা করতে হবে স্পষ্টতা, সততা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে। মিডিয়া, সাহিত্য, চলচ্চিত্র ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বিপ্লবকে তুলে ধরতে হবে—একটি নৈতিক আন্দোলন ও সর্বজনীন মানবিক আদর্শ হিসেবে।”
তিনি আলেম, শিল্পী ও চিন্তাবিদদের প্রতি আহ্বান জানান, “বিবেকের ভাষায় কথা বলুন। এমন গল্প ও প্রতীক ব্যবহার করুন যা সব নিপীড়িত মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে—ধর্ম, ভাষা বা সংস্কার নির্বিশেষে।”
আজকের দুনিয়ায় কারবালার বার্তার প্রাসঙ্গিকতা
সাইয়্যেদ আবেদি বলেন, “আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও শোষণে মানুষ প্রতিনিয়ত নিপীড়িত।
এই বাস্তবতায় ইমাম হুসাইন (আ.)-এর অমর ঘোষণা—‘আমরা কখনো লাঞ্ছিত হবো না’—শুধু ইতিহাসের কথা নয়, বরং প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক চার্টার।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “কারবালার শিক্ষা কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সেই সকল মানুষের সম্পদ, যারা সত্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে চায়।”
বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সাইয়্যেদ আবেদি বলেন, “যদি পারেন, জীবনে অন্তত একবার কারবালার পথে হেঁটে যান। দেখবেন—ভালোবাসা, ঐক্য ও সহমর্মিতার বাস্তব চিত্র কেমন। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবুও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বার্তা হৃদয়ে ধারণ করুন—সত্যের পক্ষে দাঁড়ান, অন্যায়কে প্রত্যাখ্যান করুন, এবং নিপীড়নের মুখে নীরব না থাকুন।”
কারবালা এক চিরন্তন বিবেকের ডাক
তিনি এক অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ বার্তায় বলেন, “যতদিন পৃথিবীতে অন্যায় থাকবে, ততদিন কারবালার কণ্ঠস্বর উচ্চারিত হবে।
আরবাঈন কেবল একটি দিন নয়—এটি একটি জীবন্ত বিবেকের আহ্বান।
যেমন ইমাম হুসাইন (আ.) আমাদের শিখিয়ে গেছেন
‘প্রতিটি দিনই আশুরা, এবং প্রতিটি জমিন কারবালা।’”
কারবালা শুধু ইতিহাস নয়—এটি আজও জীবন্ত।
আরবাঈন কোনো সম্প্রদায়ের সীমায় নয়—এটি বিশ্বমানবতার হৃদয়ের স্পন্দন।
আপনার কমেন্ট