হাওজা নিউজ এজেন্সি: আরবাঈন সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন হাদিউজজামান রেজার গভীর দৃষ্টিপাত উপস্থাপন করা হলো:
আরবাঈনের যিয়ারত: প্রেমের জিয়ারত
▫️ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা: আরবাঈন হলো আশুরার চল্লিশ দিন পরের দিন, যখন হৃদয়গুলো এখনো হুসাইন ইবনে আলী (আ.) ও তাঁর সাথীদের প্রতি ঘটে যাওয়া নিপীড়নের বেদনায় ভারাক্রান্ত ও ক্ষত-বিক্ষত। এই সময়, দূর-দূরান্ত থেকে আগত যিয়ারতকারীরা কেবল একটিই উদ্দেশ্য নিয়ে পদযাত্রা করেন—প্রিয়জনের সাক্ষাৎ।
▫️আবেগ ও অনুভূতির প্রকাশ: আরবাঈনের যিয়ারতকারীরা কোনো আরাম-আয়েশ কিংবা অভ্যস্ততা নয়, বরং হৃদয়ের অন্তর্গত ভালোবাসা ও অন্তরের ব্যাকুলতায় করবালার পথে যাত্রা করেন। হুসাইন (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা সকল বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দেয় এবং হৃদয়গুলোকে একত্রিত করে।
আরবাঈনের যিয়ারত: আধ্যাত্মিকতার যিয়ারত
▫️আধ্যাত্মিক যাত্রা ও আত্মিক পরিশুদ্ধি: এই যিয়ারত কেবল একটি শারীরিক ভ্রমণ নয়, বরং এক গভীর আত্মিক ও আধ্যাত্মিক সিয়্যার বা সফর। পদযাত্রার পথে যিয়ারতকারীরা দুনিয়ার মোহ ও বস্তুগত সম্পর্ক থেকে নিজেকে আলাদা করে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হন।
▫️নফসের পরিশুদ্ধি ও ধৈর্যের প্রশিক্ষণ: এই সফরে মানুষ ক্লান্তি, ক্ষুধা, গরম ও কষ্টের সম্মুখীন হয়—তবুও সবকিছু হুসাইন (আ.)-এর প্রেমে সহ্য করে। এ ধৈর্য ও ত্যাগ-তিতিক্ষাই নফসের পরিশুদ্ধি ও আত্মগঠনের উপায় হয়।
আরবাঈন: উম্মাহ গঠনের প্রতীক ও ঐক্যের বার্তা
▫️মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের ঐক্যবদ্ধ উপস্থিতি: আরবাঈনে বিশ্বের নানা জাতি, ভাষা, দেশ ও মতের মানুষ একত্রিত হন। এই বিশাল ইসলামি ঐক্য বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়: “জুলুমের বিরুদ্ধে আমরা হুসাইনের সঙ্গে আছি।”
▫️প্রতিরোধ ও জাগরণের পথ: আরবাঈনের যিয়ারত মানে হচ্ছে আশুরার বার্তা জীবিত রাখা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, মজলুমদের পাশে দাঁড়ানো এবং হকের পক্ষে রুখে দাঁড়ানোর দায়িত্ব। আরবাঈনের জিয়ারতকারী, প্রকৃত অর্থে, হুসাইন (আ.)-এর লাল রক্তিম পথের অনুসারী এবং বিশ্বের সব মজলুমের সহযোদ্ধা।
আহলে বাইতের (আ.) বাণীতে আরবাঈন
▫️ইমাম হাসান আসকারী (আ.) বলেন,
«عَلَامَاتُ المُؤْمِنِ خَمسٌ... و زِیَارَةُ الأَربَعِینَ»
(“মুমিনের পাঁচটি নিদর্শনের একটি হলো আরবাঈনের যিয়ারত।”)
পরিশেষে বলা যায়, আরবাঈনের যিয়ারত কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি একটি সমষ্টিগত ও প্রেমভরা আন্দোলন, যার মাধ্যমে মানুষ নবায়ন করে হুসাইনী আদর্শের সঙ্গে নিজের অঙ্গীকার— ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা, খোদাভীতি ও প্রতিরোধের অঙ্গীকার।
লিখেছেন: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন হাদিউজজামান রেজা (পবিত্র ধর্মীয় শহর কোম, ইরান)
আপনার কমেন্ট