হাওজা নিউজ এজেন্সি: গাজার অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিবেদক আনাস আল শারিফকে শনিবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি প্রাণনাশের হুমকি ও হামলার ঝুঁকিতে ছিলেন। সম্ভাব্য মৃত্যুর কথা ভেবে তিনি আগে থেকেই নিজের শেষ বার্তা টুইটারে লিখে রেখেছিলেন। রবিবার তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেটি প্রকাশ করলে তা দ্রুত বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়।
টুইটারে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আনাস তাঁর তিন বছরের মেয়ের সঙ্গে কথোপকথনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উচ্ছেদের হুমকির প্রসঙ্গ তোলেন।
“আমরা যদি কাতারে যাই, তুমি যাবে?” — প্রশ্ন করেন আনাস।
মেয়েটির দৃঢ় উত্তর, “না, যাবো না।”
তিনি আবার জিজ্ঞেস করেন, “তাহলে জর্ডানে গেলে?”
শিশুটি জবাব দেয়, “না, যাবো না।”
এরপর আনাস বলেন, “মিশরে গেলে সেখানে যাবে?”
তখন মেয়েটি স্পষ্ট উচ্চারণে বলে—
“না, মিশরও যাবো না। দুনিয়ার কোথাও যাবো না, গাজা ছেড়ে যাবো না। কারণ গাজাকে আমরা ভালোবাসি।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডারস (RSF) এক বিবৃতিতে জানায়, “গাজায় সাংবাদিকদের পদ্ধতিগতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
আল জাজিরা ও মিডল ইস্ট আই-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গাজার গণমাধ্যমকর্মীদের হত্যা শুধু সংবাদ প্রবাহ বন্ধ করার কৌশল নয়, বরং স্থানীয় জনগণের মনোবল ভেঙে দেওয়ারও প্রচেষ্টা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় সাংবাদিকদের হত্যার ঘটনা ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) তদন্তযোগ্য।
প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ
আনাস আল শারিফ ছিলেন গাজার অন্যতম নির্ভীক কণ্ঠস্বর। তিনি একাধিকবার ইসরায়েলি হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং তার ভিডিও ও প্রতিবেদন বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। যুদ্ধের ময়দান থেকে করা তাঁর লাইভ রিপোর্টগুলো প্রায়ই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উদ্ধৃত হতো।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ গাজা যুদ্ধের পর থেকে স্থানীয় সাংবাদিকদের মৃত্যু হার নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ মাসে ১৫০ জনের বেশি গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও তরুণ প্রতিবেদক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাংবাদিকদের হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা শুধু তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে না, বরং গাজার মানুষের কণ্ঠস্বর মুছে ফেলতে চাইছে। কিন্তু আনাস আল শারিফের শেষ ভিডিও প্রমাণ করেছে—প্রাণ হারিয়েও গাজার মানুষের প্রতিরোধের গল্প থামানো সম্ভব নয়।
আপনার কমেন্ট