মঙ্গলবার ১২ আগস্ট ২০২৫ - ১৪:৫৫
ইসলামী সভ্যতা গঠনে আরবাঈনের ভূমিকা

আরবাঈন হলো কারবালার মহাকাব্যিক ঘটনার পর ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সাথীদের শাহাদতের চল্লিশ দিন পরের স্মরণ দিবস।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আরবাঈন (চল্লিশতম দিন) হলো কারবালার মহাকাব্যিক ঘটনার পর ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সাথীদের শাহাদতের চল্লিশ দিন পরের স্মরণ দিবস। এই দিনটি শুধু একটি শোকের অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি ইসলামী সভ্যতার নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ভিত্তি গঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরবাঈন মুসলিম বিশ্বে ন্যায়বিচার, আত্মত্যাগ, ঐক্য ও মানবিক মূল্যবোধের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

১. আরবাঈনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
৬১ হিজরির ১০ মুহাররমে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (আ.) অন্যায়, স্বৈরাচার ও ধর্ম বিকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁর শহীদের পর আহলে বাইত ও বন্দী পরিবারকে দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয়। চল্লিশতম দিনে তাঁদের মুক্তি দিয়ে কারবালায় ফিরিয়ে আনা হয়। এই সময় থেকেই “আরবাঈন” স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

২. নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জাগরণ
আরবাঈনের বার্তা কেবল শোক নয়, বরং এটি হৃদয়ে নৈতিক জাগরণ সৃষ্টি করে।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসিকতা

সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগ

আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ লক্ষ্য বানানো
এই মূল্যবোধগুলো ইসলামী সভ্যতার ভিত্তি রচনা করে।

৩. সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আরবাঈনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে ঐক্য ও প্রতিবাদের চেতনা শক্তিশালী হয়েছে।

স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা

নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব

ইসলামী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণা
এভাবে আরবাঈন শুধু ব্যক্তিগত ভক্তির অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি সামাজিক পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।

৪. ইসলামী সভ্যতা গঠনে সরাসরি অবদান

ইমান ও তাকওয়ার চর্চা: আরবাঈন মানুষকে আল্লাহভীতি ও ধর্মীয় শুদ্ধতার দিকে আহ্বান করে।

উম্মাহর ঐক্য: বিশ্বের কোটি মানুষ কারবালার পথে পায়ে হেঁটে যাত্রা করে, যা ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক সীমা অতিক্রম করে এক অনন্য ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলে।

সংস্কৃতি ও শিল্প: কবিতা, জিকির, নওহা, মারসিয়া প্রভৃতি সাহিত্য ও শিল্পের ধারা ইসলামী সভ্যতার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি বাড়িয়েছে।

৫. আজকের বিশ্বে আরবাঈনের তাৎপর্য
বর্তমান সময়ে অন্যায়, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আরবাঈনের বার্তা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। কারবালার শিক্ষা আধুনিক ইসলামী চিন্তায় ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, মানবিক সহাবস্থান ও বিশ্ব শান্তির জন্য মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেষ কথা, আরবাঈন শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক স্মরণ নয়, বরং এটি ইসলামী সভ্যতার নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণের ভিত্তি। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আত্মত্যাগের শিক্ষা মুসলিম উম্মাহকে যুগে যুগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় থাকতে অনুপ্রাণিত করে। তাই বলা যায়, ইসলামী সভ্যতার গঠনে আরবাঈন একটি অপরিহার্য প্রেরণার উৎস।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha