রবিবার ৩১ আগস্ট ২০২৫ - ১১:৫৫
ইরানি রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞানীরা পশ্চিমা-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের শিকার

গত চার দশকে ইরান সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় শিকার দেশ হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে বিপুলসংখ্যক ইরানি রাজনীতিবিদ ও বিজ্ঞানী পশ্চিমা ও জায়নিস্ট-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের নিশানা হয়েছেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে বিজয়ের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, জায়নিস্ট শাসন এবং পশ্চিমা-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ইরানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এসব ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, অভ্যুত্থান, যুদ্ধ উসকানি এবং ইরানি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের হত্যা। এর লক্ষ্য ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে দুর্বল করা।

১৯৮১ সালের ভয়াবহ বোমা হামলা
১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর। এ সময়ে বহু রাজনৈতিক নেতা, আলেম ও তাত্ত্বিক সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন।

২৯ আগস্ট ১৯৮১ সালে সন্ত্রাসী সংগঠন মুজাহেদিনে খালক (এমকেও) তেহরানের পাস্তুর স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ বাহুনারের দপ্তরে ভয়াবহ বোমা হামলা চালায়। এতে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী রাজায়ি, প্রধানমন্ত্রী বাহুনার ও তেহরান পুলিশের প্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা শহীদ হন। বিস্ফোরণে ভবনের প্রথম তলা ধ্বংস হয়ে যায়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় লাশ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে; শেষ পর্যন্ত দাঁতের মাধ্যমে রাজায়ি ও বাহুনারকে শনাক্ত করা হয়।

তদন্তে প্রমাণিত হয়, এমকেও সদস্য কাশ্মীরি নিরাপত্তা কর্মকর্তা সেজে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অনুপ্রবেশ করেছিল।

এর আগে ২৮ জুন ১৯৮১-তে এমকেও তেহরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র পার্টির কার্যালয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায়, যা “হাফত-এ-তির হামলা” নামে পরিচিত। এতে বিচার বিভাগের প্রধান আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ বেহেশতিসহ ৭০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা শহীদ হন।

প্রতি বছর ২৯ আগস্ট ইরানে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং এ সপ্তাহকে সরকার সপ্তাহ ঘোষণা করা হয়েছে।

এমকেও: ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন
আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত এমকেও ইসলামি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইরানে প্রায় ১৭ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে।

১৯৮৬ সালে সংগঠনটি ইরান থেকে পালিয়ে ইরাকের একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের আশ্রয়ে যায়। সেখানে তারা সামরিক প্রশিক্ষণ নেয়, ক্যাম্প আশরাফ ঘাঁটি থেকে ইরানি নাগরিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বহু সন্ত্রাসী হামলা চালায় এবং ইরানের বিরুদ্ধে ইরাকি সেনাদের সহযোগিতা করে।

২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। পরে মার্কিন ও ইউরোপীয় সমর্থনে তাদের আলবেনিয়ায় স্থানান্তর করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে ইরানের বিরুদ্ধে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পালিয়ে যাওয়া প্রাক্তন সদস্যরা জানিয়েছেন, সংগঠনের অর্থায়ন মূলত সৌদি আরব থেকেই আসত।

পশ্চিমাদের আশ্রয় ও সমর্থন
২০১২ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর তীব্র লবিংয়ের চাপে এমকেও-কে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স প্রকাশ্যে তাদের সমর্থন দিয়ে আসছে।

সংগঠনের বর্তমান প্রধান মরিয়ম রাজাভি ফ্রান্সে অবস্থান করছেন এবং তিনি মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা জন বল্টন, মাইক পম্পেও প্রমুখের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ফ্রান্সে তাদের সম্মেলনেও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

ইরানি বিজ্ঞানীরা: সন্ত্রাসবাদের আরেক শিকার
ইসলামি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে, বিশেষত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানী পশ্চিমা ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার টার্গেটে পড়েছেন।

২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে চারজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী—মাসুদ আলী মোহাম্মাদি, মাজিদ শাহরিয়ারি, দারিউশ রেজায়িনেজাদ ও মোস্তফা আহমাদি রোশান—সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। একই সময়ে ফেরেদুন আাব্বাসি হত্যাচেষ্টা থেকে প্রাণে রক্ষা পান।

এরপর ২৭ নভেম্বর ২০২০ সালে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন সংস্থার প্রধান ড. মোহসেন ফাখরিজাদে তেহরানের পূর্ব উপশহরে এক জটিল ও প্রযুক্তি-নির্ভর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন।

এই নিখুঁত পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরন স্পষ্টতই জায়নিস্ট শাসনের সম্পৃক্ততার দিকেই ইঙ্গিত করে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha