মঙ্গলবার ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৯:২৪
ইসলামী শিক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণ: এক পবিত্র দায়িত্ব

ইউরোপের শিল্প বিপ্লব এবং তার ধারাবাহিকতায় পরিবেশবিনাশী প্রযুক্তির লাগামহীন ব্যবহার আজ পৃথিবীকে গুরুতর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয় এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়, যা জাতিসংঘও স্বীকার করেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি : বিশ্বব্যাপী শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মুনাফালোভী শোষণ, অতিরিক্ত শিল্পযন্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম, রাসায়নিক ও বিষাক্ত পদার্থের নির্বিচার ব্যবহার মাটি, পানি ও বাতাসকে দূষিত করছে। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছেন যে এ ধ্বংসযজ্ঞ এক বৈশ্বিক পরিবেশগত সঙ্কট তৈরি করেছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন জাগে—প্রকৃতি সংরক্ষণে ইসলাম, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে, কী নির্দেশনা প্রদান করে?

ইসলামে পরিবেশ সংরক্ষণের শিক্ষা
ইসলামের শিক্ষা পরিবেশ সুরক্ষাকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করে। কুরআনের বহু আয়াতে প্রকৃতি ও জীবজগতকে সম্মান করার নির্দেশনা পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “পৃথিবীতে বিচরণকারী কোনো প্রাণী নেই, আকাশে উড়ে চলা কোনো পাখি নেই—তারা তোমাদের মতোই একেকটি সম্প্রদায়।” (আন‘আম: ৬:৩৮)

আকাশ, পৃথিবী, পানি ও প্রকৃতিকে মানবজাতির হাতে অর্পিত আমানত বলা হয়েছে। তাই এগুলো ভারসাম্যপূর্ণভাবে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। এমনকি যুদ্ধকালীন শত্রুর জমিতেও বৃক্ষনিধন ও ফসল ধ্বংস করতে ইসলামী শরিয়ত নিষেধ করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে: “তিনি পৃথিবী সব জীবের জন্য সৃষ্টি করেছেন।” (আর-রহমান: ৫৫:১০)

ইসলামী গ্রন্থে এমনকি শত্রুর জমিতে গাছ কাটা বা পানির উৎস দূষণ করাকেও নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। এসব নির্দেশনা প্রমাণ করে যে প্রকৃতির সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত করা নৈতিকভাবে নিন্দনীয়।

সমসাময়িক আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি
আধুনিক ইসলামী পণ্ডিতরা পরিবেশ সংরক্ষণকে বিশ্বাস ও নৈতিকতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। ইসলামের প্রখ্যাত আলেম আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন: “প্রকৃতির প্রতি অবহেলা বিদ্রোহ, স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার ফল।”

আয়াতুল্লাহ আব্দুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি তাঁর “ইসলাম ও পরিবেশ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, পরিবেশ আল্লাহর দান, যা রক্ষা করা মানবজাতির দায়িত্ব। তাঁর মতে, পরিবেশগত সংকট কেবল ভৌত বা বৈজ্ঞানিক নয়, বরং নৈতিক ও আধ্যাত্মিকও বটে। তিনি লিখেছেন: “যে ব্যক্তি বাতাস বিশুদ্ধ করার পরিবর্তে দূষিত করে, জমি আবাদ করার বদলে ধ্বংস করে, গাছ লাগানোর বদলে কেটে ফেলে, কিংবা সমুদ্র ও ভূমি পরিষ্কার করার পরিবর্তে দূষিত করে—সে আল্লাহর সৃষ্টি রক্ষক নয়।”

ইসলামের তাওহিদভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি অস্তিত্বের ঐক্য ও পবিত্রতাকে স্বীকৃতি দেয়। ইসলাম পরিবেশকে শুধু মানুষের সম্পদ নয়, বরং আল্লাহর নিদর্শন ও পবিত্র আমানত হিসেবে বিবেচনা করে। তাই প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, পরিমিতি, সংযম এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে আরও সুন্দর রেখে যাওয়া—এসবই ইসলামী শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

পরিবেশ রক্ষা তাই ইসলামে কোনো সাময়িক উদ্বেগ নয়; বরং তা বিশ্বাসের অংশ, এক অনিবার্য দায়িত্ব, যা অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা ও বিধানের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha