বুধবার ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১০:০২
আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম পথ

আমিরুল মুমিনিন ইমাম আলী (আ.) নাহজুল বালাগার হিকমাহ (প্রজ্ঞা সম্পন্ন উক্তি) ৩৯-এ গভীরভাবে সতর্ক করেছেন যে, মুস্তাহাব (নফল বা অতিরিক্ত ইবাদত) তখনই গ্রহণযোগ্য ও মূল্যবান, যখন তা ফরজ ইবাদতের ক্ষতি না করে। অন্যথায়, সেই নফল ইবাদত আল্লাহর নৈকট্যের মাধ্যম হয় না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: আমিরুল মু'মিনিন ইমাম আলী (আ.)একটি বাস্তব উদাহরণ টেনে ধরেন: যদি কেউ অতিরিক্ত রাত জেগে শোক পালন বা ইবাদতে ব্যস্ত থাকে এবং এর কারণে ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যায়, তবে সেই নফল কাজের কোনো মূল্য থাকে না; কারণ আল্লাহর নৈকট্যের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো ফরজ ইবাদত।

নাহজুল বালাগার হিকমাহ ৩৯-তে উল্লেখ্য যে,
لَا قُرْبَةَ بِالنَّوَافِلِ، إِذَا أَضَرَّتْ بِالْفَرَائِضِ
“যখন মুস্তাহাব (নফল) ইবাদত ফরজের ক্ষতি করে, তখন তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয় না।”

ব্যাখ্যা ও মূল শিক্ষা
ইমাম আলী (আ.)-এর এই হিকমতের আসল তাৎপর্য হলো: ফরজ হলো ঈমানের ভিত্তি, যার অবহেলায় পুরো আধ্যাত্মিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মুস্তাহাব কাজ ফরজের বিকল্প নয়, বরং ফরজ সম্পন্ন হওয়ার পর আত্মাকে পরিশুদ্ধ ও উন্নত করার সম্পূরক ব্যবস্থা।

যদি ফরজ উপেক্ষিত হয়, তবে নফলের মূল্য অনেকাংশে কমে যায় বা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

বাস্তবিক উদাহরণ
কেউ যদি রাতভর আজাদারি বা জিকির করে এমনভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে যে ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যায়—তাহলে সেই মুস্তাহাব আজাদারি তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হারায়।

কেউ যদি দরিদ্রকে দান করে অথচ নিজের ওয়াজিব দেনা শোধ না করে—তাহলে তার দান পূর্ণ সওয়াব লাভ করে না।

কারো ওপর ফরজ হজ ওয়াজিব থাকা সত্ত্বেও সে নফল (উমরাহ) হজে যায়—এটিও বাতিল হয়ে যায়।

যার ওপর কাজা রোজা আছে, সে যদি নফল রোজা রাখে—তাহলে সেই নফল শারয়িভাবে অগ্রহণযোগ্য হয়।

ফরজের অনন্য মর্যাদা
ইমাম আলী (আ.) অন্যত্র (গুরারুল হিকাম, হাদিস নং ৭৮৩৫) বলেছেন,
یَسْتَدَّلُ عَلی إدْبارِ الدُّوَلِ بِأرْبَع تَضییعِ الاُْصُولِ وَ التَمَسُّکِ بِالْفُرُوعِ وَتَقْدیمِ الاْراذِلِ وَتَأخیرِ الاْفاضِلِ
“চারটি জিনিস রাষ্ট্র পতনের কারণ হয়: মূল বিষয় অবহেলা, গৌণ বিষয়ে আঁকড়ে ধরা, নিচু মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং মহৎ ব্যক্তিকে পিছিয়ে দেওয়া।”

এ বাণী প্রমাণ করে যে, ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ফরজকে অবহেলা করে মুস্তাহাবকে গুরুত্ব দিলে ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং তার নেতিবাচক প্রভাব গোটা সমাজে পড়ে।

ফিকহি ব্যাখ্যা
বিখ্যাত উসুলি আলেমদের মতে, যখন কোনো ব্যক্তি ফরজ ছেড়ে মুস্তাহাবে ব্যস্ত হয়, তখন সেই মুস্তাহাব কাজ শুধু অকার্যকর নয়, বরং কখনো কখনো “হারাম” বা নিষিদ্ধের পর্যায়ে চলে যায়। যদিও কিছু আলেমের বিশ্লেষণে ভিন্নতা আছে, তবুও মূল নীতি একই—ফরজ সর্বদা মুস্তাহাবের উপরে।

পরিশেষ, আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ফরজ ইবাদত। মুস্তাহাব তখনই আলোকিত হয়, যখন তা ফরজের ক্ষতি করে না।

তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হলো প্রথমে ফরজ ইবাদত যথাযথভাবে আদায় করা, এরপর সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী মুস্তাহাব আমলে মনোযোগ দেওয়া।

সূত্র:

১. গুরারুল হিকাম, হাদিস ৭৮৩৫

২. মাসাদিরুল নাহজুল বালাগা, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৭

৩. তামামু নাহজুল বালাগা, পৃষ্ঠা ৭২৮

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha