বৃহস্পতিবার ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১০:৩২
হযরত খাদিজা (সা.আ.)-এর বয়স নিয়ে ঐতিহাসিক বিভ্রান্তির জবাব

ইতিহাসবিদদের মতে, রাসূলুল্লাহ (সা) এবং হযরত খাদিজা (সা.আ.)-এর মধ্যে বয়সের তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না—সর্বাধিক হলে তিন বছরের মতো। অনেক প্রামাণ্য সূত্র বলছে, খাদিজা (সা.আ.)-এর বয়স বিয়ের সময় ২৫-২৮ বছরের মধ্যে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু সূত্রে তাঁর বয়স ৪০ বছর উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইতিহাসবিদদের মতে সঠিক নয় এবং ব্যতিক্রমী একটি মত।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হাদিস ও সিরাতের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা) ও খাদিজা (সা.আ.)-এর বিয়ে হয়েছিল নবুওয়তের ১৫ বছর আগে, ১০ রবিউল আউয়াল তারিখে। সে সময় নবীজি (সা)-এর বয়স ছিল ২৫ বছর এবং অধিকাংশ গবেষকের মতে খাদিজা (সা.আ.)-এর বয়স ছিল ২৫ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

বিখ্যাত ইসলামি গবেষক ও ইতিহাসবিদদের মত:
▫️ইমাম বাইহাকি: খাদিজা (সা.আ.)-এর বয়স মৃত্যুকালে ৫০ বছর বলেই সঠিক মত দেন, যা অনুযায়ী বিয়ের সময় তাঁর বয়স ২৫ বছর হয়।

▫️ইবনে ইমাদ হানবালি (শযারাতুয যাহাব): অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে বিয়ের সময় খাদিজা (সা.আ.)-এর বয়স ছিল ২৮ বছর।

▫️হাকিম নিশাপুরী ও ইবনে ইসহাক (সিরাত লেখক): খাদিজা (সা.আ.)-এর বয়স বিয়ের সময় ২৮ বছর বলেছেন।

▫️ইবনে সাদ, যাহাবি, ইরবিলি, ইবনে আসাকির, ইবনে আব্বাস থেকেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, যখন এত প্রামাণ্য সূত্রে বয়স ৩০ বছরের কম বলা হয়েছে, তখন কেন খাদিজা (সা)-এর বয়স ৪০ বছর হিসেবে প্রচার করা হয়? গবেষকদের মতে, এটি ছিল প্রাথমিক যুগে কিছু গোষ্ঠীর প্রচেষ্টা, যারা চেয়েছিল হযরত আয়েশা -কে নবীর শ্রেষ্ঠতম স্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করতে এবং খাদিজা (সা.আ.)-এর মর্যাদা কমিয়ে দেখাতে।

খাদিজা (সা.আ.)-এর পূর্ববর্তী জীবন
ইতিহাসে এসেছে যে কুরাইশের কোনো সম্মানিত ব্যক্তি ছিল না যিনি খাদিজা (সা.আ.)-কে বিয়ের প্রস্তাব দেননি। কিন্তু তিনি সবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন।

ইবনে শহর আশুব বলেন, "নবীজি (সা) খাদিজা (সা.আ.)-কে বিয়ে করেছিলেন, আর তিনি ছিলেন কুমারী।"

যে সন্তানদের খাদিজা (সা.আ.)-এর বলে মনে করা হয়, অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, তারা ছিলেন খাদিজা (সা.আ.)-এর বোন হাল্লার সন্তান, যাদের তিনি নিজের তত্ত্বাবধানে বড় করেছিলেন।

বিয়ে প্রস্তাব ও আকদ
ইবনে হিশাম বর্ণনা করেন, খাদিজা (সা.আ.) নিজেই রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সরাসরি প্রস্তাব দেন এবং বলেন,  "হে আমার চাচাতো ভাই! আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই কারণ তুমি আমার আত্মীয়, তোমার চরিত্র মহান, তুমি সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।"

তবে অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে, খাদিজা (সা.আ.) তাঁর বন্ধু নাফিসা বিনতে মুনিয়াকে পাঠিয়েছিলেন প্রস্তাব জানানোর জন্য।

আকদ অনুষ্ঠান ও মহর
আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় কুরাইশের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে। আবু তালিব (আ)-এর বিখ্যাত খুদবা: "মুহাম্মদ (সা)-এর সমকক্ষ কুরাইশে কেউ নেই; তিনি সবার চেয়ে মর্যাদাবান। আর খাদিজা ও মুহাম্মদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতি রয়েছে।"

মহরের পরিমাণ হিসেবে অধিকাংশ বর্ণনায় এসেছে ১২ উকিয়া (প্রায় ৪৮০ দিরহাম)। কিছু বর্ণনায় ২০টি উট বা ৫০০ দিরহাম উল্লেখ আছে।

খাদিজা (সা.আ.)-এর জীবন ও মর্যাদা
খাদিজা (সা. আ.)-কে কুরাইশের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলা হত। তিনি ছিলেন ধনী, মর্যাদাবান এবং নৈতিকতায় অনন্য। জাহেলি যুগেও তাঁর নাম ছিল “তাহিরা” (পবিত্রা)। তিনি নবীজি (সা)-কে সর্বপ্রথম ঈমান এনে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং তাঁর সর্বস্ব আল্লাহর পথে ব্যয় করেছিলেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha