হাওজা নিউজ এজেন্সি: বর্তমান যুগেও কিছু ব্যক্তি ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর সান্নিধ্য ও সাক্ষাৎ লাভের মহান সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।
তবে, গায়বাতে কুবরা (অনির্দিষ্টকালীন গায়বাত)-এর সময় নিজেকে ইমামের বিশেষ প্রতিনিধি বা মধ্যস্থ হিসেবে দাবি করা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অবৈধ।
ইমামের চতুর্থ প্রতিনিধি আলী বিন মুহাম্মদ সামুরী (রহ.)-কে ইমাম মাহদী (আ.) একটি তাওকী‘-এ নির্দেশ দেন,
«… فَاجْمَعْ أَمْرَکَ وَ لاَ تُوصِ إِلَی أَحَدٍ فَیَقُومَ مَقَامَکَ بَعْدَ وَفَاتِکَ فَقَدْ وَقَعَتِ اَلْغَیْبَةُ اَلتَّامَّةُ فَلاَ ظُهُورَ إِلاَّ بَعْدَ إِذْنِ اَللَّهِ تَعَالَی ذِکْرُهُ وَ ذَلِکَ بَعْدَ طُولِ اَلْأَمَدِ وَ قَسْوَةِ اَلْقُلُوبِ وَ اِمْتِلاَءِ اَلأَرْضِ جَوراً وَ سَیَأْتِی شِیعَتِی مَنْ یَدَّعِی اَلْمُشَاهَدَةَ [أَلاَ فَمَنِ اِدَّعَی اَلْمُشَاهَدَةَ] قَبْلَ خُرُوجِ اَلسُّفْیَانِیِّ وَ اَلصَّیْحَةِ فَهُوَ کَذَّابٌ مُفْتَرٍ …»
“তোমার সকল কাজ একত্র করো এবং কাউকে অসিয়ত (উত্তরাধিকারী বা স্থলাভিষিক্ত) করো না, যেন সে তোমার মৃত্যুর পর তোমার স্থলাভিষিক্ত বা বিশেষ প্রতিনিধি হয়ে না ওঠে। নিশ্চয়ই পূর্ গায়েবাতে সুগরা (বৃহত্তর অনির্দিষ্টকালীন গায়বাত) ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
(এরপর) দেখা হবে শুধুমাত্র আল্লাহর অনুমতি ও ইজাজতের মাধ্যমে এবং তা হবে দীর্ঘ সময় পর, যখন হৃদয় কঠোর হয়ে যাবে এবং পৃথিবী অন্যায় ও জুলুমে পূর্ণ হবে।
(এবং) আমার শিয়াদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি দাবি করবে যে তারা আমাকে দেখেছে। জেনে রাখো, যারা ‘সুফিয়ানীর আগমন’ এবং আকাশীয় সঙ্কেত (সীহা) সলগঠিত হওয়ার আগে এমন দাবি করবে, তারা মিথ্যাবাদী এবং কল্পনাপ্রসূত।”
তাওকী‘-এর ব্যাখ্যা
১. গায়বাতে সুগরা থেকে গায়বাতে কুবরার সূচনা
এই তাওকী‘ ঘোষণা করে যে ক্ষণস্থায়ী গায়বাত (গায়বাতে সুগ্রা) শেষ হয়েছে এবং এখন থেকে বৃহত্তর ও দীর্ঘস্থায়ী গায়বাত (গায়বাতে কুবরা) শুরু হলো।
২. স্থলাভিষিক্ত করার নিষেধাজ্ঞা
ইমামের পক্ষ থেকে শেষ বিশেষ প্রতিনিধি আলী বিন মুহাম্মদ সামুরী (রহ.)-কে নির্দেশ দেওয়া হলো, তিনি আর কাউকে নিজের পরবর্তী প্রতিনিধি বা বিশেষ নায়েব হিসেবে মনোনীত করবেন না।
৩. মিথ্যা দাবিদারদের নিন্দা
এ নির্দেশনায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, গায়বাতে কুবরার পর কেউ যদি নিজেকে ইমামের প্রতিনিধি বা মধ্যস্থ বলে দাবি করে, তবে সে মিথ্যাবাদী ও প্রতারক।
৪. সাক্ষাৎ প্রাপ্তির ভ্রান্ত দাবি
এখানে সতর্ক করা হয়েছে, কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় দাবি করে যে সে ইমামের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ করে বা তাঁর সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে, তবে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং গ্রহণযোগ্য নয়।
মূল বিষয়
মানুষ ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর সান্নিধ্য বা সাক্ষাৎ পেতে পারে, তবে এটি স্বতঃসিদ্ধ বা ব্যক্তিগত ইচ্ছার ভিত্তিতে দাবি করা যায় না।
গায়বাতে কুবরা বা অনির্দিষ্টকালীন গায়বাতে নিজেকে বিশেষ প্রতিনিধি বা মধ্যস্থ প্রমাণ করার যে কোনো দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এই তাওকী‘ এবং ঐতিহাসিক কাহিনী প্রমাণ করে যে সাক্ষাৎ বা শারফিয়াবি ঘটতে পারে, কিন্তু মিথ্যা দাবির সঙ্গে কখনো মিশানো যাবে না।
তাওকী‘-এ যে ‘মিথ্যাবাদী’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে যারা নিজেকে নায়েব বা বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাক্ষাৎ বা সান্নিধ্য দাবি করে। এটি মোটেও বাস্তব সাক্ষাৎ বা শারফিয়াবি বন্ধ করার নির্দেশ নয়। প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো: নিজেকে ইমামের বিশেষ প্রতিনিধি বা মধ্যস্থ হিসেবে দাবি করা, সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ।
এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে, গায়বাতে কুবরায় ইমামের সাথে সাক্ষাৎ বা সান্নিধ্য সম্ভব, তবে এটি নিজস্ব ইচ্ছায় বা স্বেচ্ছায় দাবি করা যাবে না।
যারা গায়বাতে কুবরার সময় নিজেকে নায়েব বা মধ্যস্থ প্রমাণ করতে চায়, তারা মিথ্যাবাদী এবং কল্পনাপ্রসূত।
এই তাওকী‘ এবং ঐতিহাসিক কাহিনী একসাথে প্রমাণ করে যে ইমামের সাক্ষাৎ প্রাপ্তি বা বাস্তব শারফিয়াবি এবং নায়েব হওয়ার মিথ্যা দাবির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
সুতরাং, এটা সুস্পষ্ট যে- ইমামের সান্নিধ্য বা সাক্ষাৎ স্বাভাবিকভাবে ঘটতে পারে, কিন্তু নিজেকে বিশেষ প্রতিনিধি বা মধ্যস্থ প্রমাণ করার যে কোনো দাবি মিথ্যা ও অগ্রহণযোগ্য।
সূত্র: ‘ইমামত সম্পর্কিত দশটি প্রশ্নের উত্তর’ – আয়াতুল্লাহ সাফী গুলপায়গনি; প্রয়োজনীয় পরিমার্জিত রুপে)
আপনার কমেন্ট